বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হয়েছে গতকাল বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয়বারের মতো করোনাকালীন সময়ে আমরা এই দিবসটি পালন করেছি। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘use heart to connect every heart’। বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি হার অনেক বেশি। যাদের বহুমূত্র, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে উচচমাত্রার LDL cholesterol, বংশানুক্রমিক (বাবা-মা হার্ট অ্যাটাকে ভুগছেন), ধুমপান, অলস জীবন, অতিরিক্ত ওজন বা obesity এবং বিশেষ করে কোভিডের কারণে রক্ত জমাট বাঁধা হার্ট এ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ।
হার্ট অ্যাটাকের সময় রোগী বুকে খুব ভারি ভাব, সাথে গলায় চাপ বোধ, হাতে ছড়িয়ে পড়া বা পেটের উপর তীব্র ব্যথা যা পিঠের পিছনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাথে ঘাম, শ্বাসকষ্ট ও হৃদস্পন্দনের গতিসম্পন্ন, চাপ কমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। উল্লেখ্য, বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগী ব্যথা অনুভব নাও করতে পারেন, যাকে Silent MI বলে।
হার্ট এ্যাটাকে সঠিক সময়ে অর্থাৎ প্রথম ৯০ মিনিটের মধ্যে বন্ধ রক্তনালীর রক্ত প্রবাহ পুনসঞ্চালন করতে না পারলে, হৃদপিণ্ডের মাংসপেশির জীবকোষের (myocardial cell death) মৃত্যু রোধ করা তথা হার্টের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। হৃদরোগীর জন্য প্রতি মিনিটই মূল্যবান। হার্ট এ্যাটাকের সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে সম্ভব হলে Ticagrelor 90mg ২-৪ টি বা clopidogrel 75mg ৪ টা সহ Aspirin75mg ২টা, Atorvastatin 40mg একসাথে খাওয়ানোর সাথে সাথে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতাল , ক্লিনিক বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তথা Cathlab আছে এমন হাসপাতালে নেয়া জরুরি। প্রাক কোভিড সময়ে আমাদের Evercare Hospital Dhaka তে ২৪/৭ ঘণ্টা primary PCI এর মাধ্যমে ব্লক নির্ণয় ও রিং ( Stenting) বা severe TVD হলে বাইপাস বা হাইব্রিড বাইপাস ( আক্রান্ত রক্তনালীতে রিং বা stent বসিয়ে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে) রোগীর প্রদাহ কমিয়ে আনা ও পরবর্তিতে বাইপাস সার্জারি করা। কোভিডকালীন সময়ে pharmacoinvasive therapy যা বর্তমানে rtPA / Tenecteplase (TNK) বা STK দিয়ে রক্তনালীর ব্লক আংশিক (১০-২০ ভাগ) ছুটাতে পারলে রোগীর হার্টের ক্ষতিকর দিক হতে রক্ষা করা যাবে। TNK দেশের আনাচে কানাচে দেয়া সম্ভব। মাত্র ৫-১০ সে সময় ধরে হার্ট এ্যাটাকের ১০ মিনিটের মধ্যে দেয়া সম্ভব। পরবর্তীতে অ্যানজিওগ্রাম করে ব্লক নির্ণয় ও প্রয়োজনমতো রিং বা বাইপাস চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
মনে রাখতে হবে রিং বা বাইপাস কোনোটাই পূর্ণ সমাধান দিতে পারবে না।একটা হার্ট এ্যাটাক পরবর্তী হার্ট এ্যাটাকসহ স্ট্রোক ও পায়ের রক্তনালীর ব্লকে আক্রান্ত হতে পারেন। জটিলতা সমূহের মধ্যে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, LVF বা হার্ট ফেইলিওর , কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা হার্ট বড় হয়ে যাওয়া অন্যতম। এছাড়াও বাত্বজ্বর, জন্মগত হার্টের ভাল্বের এবং বৃহৎ রক্তনালীর সমস্যা, হার্টের অন্তর প্রকোষ্ঠের দেয়ালে ছিদ্র অন্যতম।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬৪টি কার্ডিয়াক cathlab সহ অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। কোভিড সময় সর্বাধিক সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা আমরা সাফল্যের সাথে করতে পেরেছি ও করছি।
ঔষধের পাশাপাশি জীবনধারার পরিবর্তন, ধুমপান পরিত্যাগ, চর্বিযুক্ত ও অতিরিক্ত ভাত মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত সান্ধ্যকালীন হাঁটাহাটি হার্টের রোগীর জন্য অবশ্য করনীয়। এতে করে LDL বা খারাপ চর্বি কমানো যায়।
এছাড়া, করোনাকালীন সময়ে নিয়মিত ২০ সেকেন্ড হাত সাবান দিয়ে ধৌত করা, মাস্ক ব্যবহার ও ৩-৬ ফুট দূরত্বে জন সমাগম এড়িয়ে চলা অবশ্য পালনীয় ।
তবেই আমরা সকলকে হৃদরোগ বা হার্ট এ্যাটাকের জটিলতা হতে বাঁচাতে পারবো। ভাল ও সুস্থ থাকবেন। শুভকামনা!
লেখক : ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট
এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা