বর্তমান করোনা মহামারির কারণে বেশিরভাগ মানুষের দেখা দিচ্ছে ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা। এমনকি করোনা সেরে যাওয়ার পরেও অনেকের ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। তাই বর্তমানে আমাদের ফুসফুসের যত্ন নেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। শ্বাসযন্ত্রের খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের হায়দ্রাবাদের ইয়াশোদা হসপিটালসের ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি এবং স্লিপ মেডিসিনের কনসালটেন্ট ডা. ভিসওয়াসভারান বালাসুব্রামানিয়ান।
পালমোনোলজি বিভাগ শ্বাসযন্ত্রের রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ে কাজ করে। ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. ভিসওয়াসভারান বালাসুব্রামানিয়ান জানান, ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি হলো পালমোনারি মেডিসিনের একটি বিশেষ শাখা, যা মিনিম্যালি ইনভেসিভ ব্রঙ্কোস্কোপিক পদ্ধতি অবলম্বন করে রোগীকে জটিল অস্ত্রোপচার এড়াতে সহায়তা করে। মিডিয়াস্টিনাল লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি নির্ণয়ের জন্য ইবিইউএস এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এই পদ্ধতিতে রোগ নিরাময়ের ফলে যক্ষ্মা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। কেন্দ্রীয় শ্বাসনালীতে সমস্যা দেখা দিলে নেভিগেশন ব্রঙ্কোস্কোপি এবং রেডিয়াল ইবিইউএস-এর মতো অন্যান্য পদ্ধতিগুলো স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করে রোগীকে সুস্থ হতে এবং ক্যান্সার আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের অবস্থার উন্নতি সাধনে সহায়তা করে। অন্যদিকে মেডিকেল থোরাকোস্কোপি অনিয়মিত প্লুরাল ইফিউশন মোকাবিলায় সাহায্য করার পাশাপাশি প্রয়োজনে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে সহায়ক। অবস্ট্রাক্টিভ এয়ারওয়ে ডিজিজের ক্ষেত্রে, ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি এবং ব্রঙ্কিয়াল থার্মো-ভ্যাপার অ্যাবলেশন পদ্ধতি দ্বারা গুরুতর হাঁপানি এবং সিওপিডি রোগীদের অবস্থার উন্নতি সম্ভব।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শ্বাসযন্ত্রের সুস্থতা। আর এই সুস্থতা বজায় রাখতে আমাদের দৈনন্দিন কিছু করণীয় রয়েছে। শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসে এবং রক্তের অক্সিজেনেশনের কাজ করে থাকে। ধূমপান ত্যাগ, বাইরের দূষণ এড়ানো, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, গুরুতর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাল সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত টিকা নেওয়ার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রের সুস্থতা এবং যথাযথ কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। সেইসাথে পর্যাপ্ত হাইড্রেশন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুষ্টি বজায় রাখার বিষয়েও জোর দিয়েছেন ডা. বালাসুব্রামানিয়ান।
ঘুম হলো সুস্থ জীবনযাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দিনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আমরা ঘুমের জন্য ব্যয় করি। প্রতিদিনের কার্যকারিতার উপর পর্যাপ্ত ঘুমের একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে। আজকাল তরুণদের স্লিপ ডিজঅর্ডার একটি সাধারণ সমস্যা। স্লিপ ডিজঅর্ডার এড়াতে আমাদের কোন জীবনধারা অনুসরণ করা উচিত, সে বিষয়ে ডা. বালাসুব্রামানিয়ান তার অভিজ্ঞ দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। ঘুমের প্রক্রিয়াটিকে সুগম করতে কিছু ভালো অভ্যাস রপ্ত করা প্রয়োজন। যেমন- ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠার প্যাটার্ন বজায় রাখা, ধূমপান, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা ইত্যাদি। এছাড়া নিয়মিত শরীরকে সক্রিয় রাখার মাধ্যমেও প্রশান্তির ঘুম নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি রাতে ভারি খাবার এড়িয়ে এবং ঘুমের অন্তত ১ ঘণ্টা আগ থেকে বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস যেমন- মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ব্যবহারে সিমাবদ্ধতা আনার মাধ্যমে যে কেউ স্লিপ ডিজঅর্ডার এড়াতে পারবেন।
চলমান মহামারিতে সংক্রমণ যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসা দিতে যেয়ে আইসিইউ সংকট দেখা দেয়। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত চিকিৎসা বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য ডা. ভিসওয়াসভারান বালাসুব্রামানিয়ান কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার সার্ভিসসমূহ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রোটোকল সিস্টেম অনুযায়ী নিয়মিত অবকাঠামো আপডেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কোভিড-১৯ এর মতো মহামারির সংক্রমণ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে পরিবর্তনশীল চিকিৎসা প্রোটোকলগুলোর ঘন ঘন আপডেট করা এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মী এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের নিয়োগ করা আবশ্যক। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মানসিক এবং শারীরিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।
উল্লেখ্য, ইয়াশোদা হসপিটালস বরাবরই এর বিশেষ স্বাস্থ্য সেবার জন্য বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত। ইয়াশোদা হসপিটালস সমগ্র হায়দ্রাবাদ এবং ভারতের অন্যতম একটি সেরা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী হসপিটাল।
বিডি প্রতিদিন/এমআই