ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি, কিন্তু ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ মানে একটু বাড়তি খাওয়ার দিকে মনযোগ চলে যাওয়া। আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত তেল-চর্বি জাতীয় খাবার আমাদের অনেকের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তাই ঈদের আনন্দ ঠিক রাখার জন্য হলেও আমাদের খাবারের পরিমাণ বুঝে খেতে হবে।
বর্তমান এ আমাদের পরিবেশটাও অন্যরকম। অত্যন্ত গরম এখন বিদ্যমান। যে কারণে ঈদের দিনের খাবার ও আমাদের নির্বাচন করে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এক দুই দিন মাংস বেশি খেতে যদিও বাধা নেই, তবুও পরিমাণ বুঝে খেতে হবে। সমস্যা হলো যারা অনেক দিন যাবৎ বিভিন্ন রোগে ভোগেন যেমন
যাদের পেটের সমস্যা
উচ্চ রক্তচাপ
ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ
কিডনি বা
লিভারের, রোগ আছে কিংবা এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ আছে তাদের ঈদের দিন বা পরের দিনগুলো মাংস কীভাবে কতটুকু খাবেন তা জেনে বুঝে নিতে হবে বা সতর্কতার সঙ্গে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
আসুন জেনে নেই কী কী অসুবিধা বা শারীরিক সমস্যা হতে পারে যদি আমরা খাবারের পরিমাণ ঠিক রাখতে না পারি।
যেসব সমস্যা হতে পারে :
১. হজমের সমস্যা থেকে ডায়রিয়া হওয়া বা পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
২. উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং এর থেকে স্ট্রোক পর্যন্ত হওয়া।
৩. ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া।
৪. কিডনিজনিত সমস্যা বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ সেরাম ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
৫. লিভারের সমস্যা দেখা দেওয়া।
৬. যাদের এনাল ফিশার ও পাইলস জাতীয় রোগ আছে, তাদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে, এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণও হতে পারে।
যেসব কারণে মূলত সমস্যাগুলো হয়ে থাকে :
প্রধান সমস্যাটা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণে। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। কোরবানির মাংস পরিমাণে একটু বেশিই খাওয়া হয়। অধিক পরিমাণে মাংস খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা, পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে। গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত রোগীদের সমস্যাটা আরও বেশি হয়। পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাদ্য গ্রহণ না করার দরুন অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন।
অতিরিক্ত চর্বি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোরবানির সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত। গুরু বা খাসির মাংসকে এক কথায় বলা হয় লাল মাংস বা রেড মিট। লাল মাংস প্রোটিনের প্রধান উৎস, শরীরের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ ও শরীরের গঠনে যার ভূমিকা অপরিসীম। তবে লাল মাংসের যেমন উপকার আছে, তেমনি রয়েছে অনেক ঝুঁকিও। এতে আছে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত। এগুলো শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের যেমন কোলন ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে লাল মাংসে।
করণীয় কি কি :
১. যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি বাদ দিতে হবে।
২. মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খেতে হবে।
৩. ফ্রুট সালাদ রাখা যেতে পারে।
৪. টক দই বা বোরহানি রাখতে পারেন।
৫. খাওয়ার কিছু সময় পর ইসবগুলের ভুসি পানি দিয়ে খেতে পারেন।
৬. সকালের খাবারে সেমাই বা পায়েস রাখলে সঙ্গে অন্য কোনো কারবোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখবেন না। কেননা সেমাই এবং পায়েস এ সব খাদ্য গ্রুপ বিদ্যমান। তাই আলাদা করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৭. দুইটি প্রধান খাবারের মাঝে ক্যালোরি বহুল খাবার অ্যাভয়েড করতে হবে। এ সময়ে ফ্রুট বা ন্যাচারাল ফ্রুট জুস, ডাবের পানি নরমাল সালাদ রাখা যেতে পারে।
৮. দুপুর এবং রাতের খাবারে এসব রাখবেন কিন্তু পরিমাণটা আপনার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, খাবারটা প্রতিদিন খেতে পারবেন পরিমিত পরিমাণ রেখে কিন্তু একদিন এ বেশি খেয়ে অসুস্থ হলে পরের দিন থেকেই খাওয়া বাদ হয়ে যেতে পারে। তাই পরিমিত খেতে হবে।
৯. বিকেলে হালকা খাবাব, সালাদ, ফ্রুট এগুলো রাখা যেতে পারে।
১০. সন্ধ্যার পর বা ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ হেঁটে নিতে পারেন তাতে বাড়তি ক্যালরি শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।
১১. প্রচুর পরিমাণে পানি বা পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
১২. বাসায় স্যালাইন বা কাঁচকলা বেদানা এগুলো রেখে দেবেন যেন লুজ মোশান হলে সঙ্গে সঙ্গে এগুলো খেতে পারেন।
আশা রাখি, আমরা সবাই এ নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করতে পারব। ঈদের পূর্ণ আনন্দ আমরা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারব। সবশেষে যেহেতু করোনা চলছে তাই আমাদের সবার আগে সেফটি মেনটেইন করে চলতে হবে।
লেখক: পুষ্টিবিদ
ল্যাব এইড লিমিটেড
প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বনানী