ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিধানসভা নির্বাচন। নির্ঘণ্ট ঘোষণা না হলেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত চলেছে। কিন্তু এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস না সিপিআইএম কাকে তাদের জোট সঙ্গী করবে সেটা ভেবেই কুল কিনারা পাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।
কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতাই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী। তাদের যুক্তি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট না করলে কংগ্রেসের আসন ৩১ থেকে ২০ এর নিচে নেমে যাবে। অন্যদিকে, তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষপাতী নন দলের বাকী অংশ। যাদের মধ্যে আছেন দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, ওমপ্রকাশ মিশ্র, কৃষ্ণা দেবনাথ, মায়া ঘোষ, দেবব্রত বসুর মতো নেতারা। তাদের মতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে দলটাকে গিলে ফেলবে তৃণমূল। তারচে' বরং বামেদের সঙ্গেই জোট করা ঢের ভালো। বামরা অন্তত দলটার ওপরে থাবা বসাবে না। যদিও কেউ কেউ আবার বিষয়টি কংগ্রেস হাইকমান্ডের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।
কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, দলের সহসভাপতি রাহুল গান্ধীরাও তৃণমূল এবং বামেদের সঙ্গে সমান সদভাব রেখে চলছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে জোটের ব্যাপারে রাজ্য স্তরের নেতাদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। ফলে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এককভাবে লড়বে না বাম কিংবা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে নির্বাচনে যাবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার ব্যাপারে রাজ্যটির শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরও তেমন কোন তাগিদ নেই। কারণ গত লোকসভা, পুরসভা, উপনির্বাচনসহ গত কয়েকটি নির্বাচনে একা লড়ে ভালো ফল করেছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই এবারও একলা চলো নীতি নিয়েই চলছে মমতার ঘাসফুল। তাদের লক্ষ্য এককভাবে লড়াই করে রেকর্ড আসনে জয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসা। এ ব্যাপারে রণকৌশলও গ্রহণ করছে তারা। সে কারণে কংগ্রেসকে নিয়ে মাথাব্যাথা নেই শাসকদলটির। এই অবস্থায় কংগ্রেস যদি যেচে তৃণমূলের কাছে জোট বার্তা নিয়ে যায় আর তা যদি তৃণমূল ফিরিয়ে দেন সেটা খুবই অপমানজহনক হয়ে উঠবে কংগ্রেসের কাছে।
উল্টোদিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে সিপিআইএমও একপ্রকার পা বাড়িয়ে আছে। দুইদিন আগেই সিপিআইএম-এর সর্বভারতীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। কারণ পশ্চিমবঙ্গে বামদের একার পক্ষে তৃণমূলকে হারানো সম্ভব নয় তা ভাল করেই জানেন ইয়েচুরি। আর তাই রাজ্যে বাম বিরোধী ভোট শক্তিশালী করতে কংগ্রেসের সাহায্য খুবই জরুরী। কংগ্রেসকে নিয়ে পথ চলতে সিপিআই কিংবা আরএসপি’র মতো শরিক দলগুলির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছে ইয়েচুরিসহ বড় শরিক দলের নেতারা।
গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ৪২টি আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল ১৮৪টি আসনে। বর্তমানে কংগ্রেসের ৪২ জন বিধায়কের মধ্যে ১১ জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বাকী ৩১ জন কংগ্রেসেই রয়েছেন। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এরা প্রতেক্যেই চাইছেন নিজেদের জয় সুনিশ্চিত করতে। সেই কারণেই শেষ পর্যন্ত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কাকে জোট সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন সেটাই দেখার।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা