বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকলেও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে মন্তব্য করেছেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। বুধবার রাতে আগরতলার সুকান্ত একাডেমির মিলনায়তনে রাজ্যপালের লেখা ‘যা ছিল আমার দেশ’ নামাঙ্কিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। তথাগত বলেন ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সেদেশের সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু দুর্ভ্যাগবশত হিন্দুরা এখনও নিরাপত্তাহীনতাবোধ করেন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় রয়েছেন’।
রাজ্যপাল বলেন, ‘যারা দেশের হাজার হাজার মানুষকে নিধন করেছিল সেই সব কসাইদের শাস্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে’। তিনি বলেন ‘১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ২৯ শতাংশ হিন্দু ছিল কিন্তু বর্তমানে সেটা কমে ৮ থেকে ৯ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে’। পূর্ব পাকিস্তানের আমলে পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর অত্যাচার, গণহত্যার বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন ভারতের জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যার কথা অনেকে জানলেও বাংলাদেশের খুলনা জেলার চাকনগরে তার থেকে বেশি ভয়ঙ্কর গণহত্যার ঘটনা অনেকেই জানেন না। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু ১৯৭১ সালের ২০ মে চাকনগরে পাক বাহিনী ও তাদের রাজাকাররা গুলি, বেয়নেট এবং পদদলিত করে প্রায় দশ হাজার নিরস্ত্র হিন্দুকে হত্যা করে’।
কলকাতায় জন্ম হলেও বিজেপি’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক সভাপতি তথাগত রায়ের আদি নিবাস বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি বলেন, তার বইটি মুসলিমদের ওপর হিন্দুদের ঘৃণাবোধ তৈরি করা কিংবা ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিভেদ ও শত্রুতা তৈরি করার জন্য নয় লেখা হয়নি। শুধুমাত্র সত্যি কথা বলতেই এই বইটি লেখা হয়েছে। নিজের দেশ হারানোর দুঃখ থেকে আর কোনও বড় দুঃখ নেই। এর আগে অনেক বই লেখা হয়েছে, অনেক ছবি নির্মিত হয়েছে কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে হিন্দুরা কেন পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে বাধ্য হলেন সেটা কোথাও তুলে ধরা হয়নি’।
তথাগত রায় আরও বলেন, আমার প্রথম বই ‘মাই পিউপিল, আপরুটেড ইন ২০০০’ লেখার পর বাংলাদেশে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, কারণ ঢাকা আমায় ভিসা দেয়নি কিন্তু গত বছর আমি তিনবার বাংলাদেশ সফর করেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে’।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যারয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক অরুণোদয় সাহা, এই গ্রন্থটির প্রকাশক মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার সবিতেন্ত্র নাথ রায় প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ