‘কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং দিল্লিতে যদি হামলা চালানো যায় তবেই তাদের চেতনা হবে এবং ভারত কাশ্মীরের উপর থেকে তাদের দখলদারি ছাড়বে’-ঠিক এভাবেই ভারতকে হুমকি দিল জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত নতুন এক ভিডিও বার্তায় জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাশ্মীরকে জয় করতে হলে কলকাতাসহ ভারতের অন্য শহরগুলিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে হবে।
আল কায়েদা’র উপমহাদেশের সেকেন্ড-ই-কমান্ড উসামা মেহমুদ ওই ভিডিও বার্তায় জানান, ‘কাশ্মীরকে ধরে রাখার জন্য ভারত ৬ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। কলকাতা, বেঙ্গালুরু ও নয়া দিল্লিতে যদি হামলা চালানো যায় তবে তারা (ভারতীয় সেনা) অনুভব করতে পারবে এবং কাশ্মীরের উপর থেকে ভারতীয় সেনার প্রভাব দুর্বল হবে’।
এনিয়ে মেহমুদের বক্তব্য ‘উপমহাদেশে জিহাদী কার্যকলাপকে আরও বেশি শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে এবং সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে কাশ্মীরের মানুষের সমর্থনে দাঁড়াতে হবে’।
যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে এই জঙ্গি নেতা বলেন, ‘আমেরিকার দিকে তাকাও, ঠিক এভাবেই আমেরিকার কাছেও নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখাটা কঠিন হয়ে উঠেছে। ভারতীয় সেনা ও হিন্দু সরকারের শান্তিপূর্ণ বিশ্বকে একটা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা উচিত’।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকেও হুমকি দিয়েছে আল কায়েদার ওই জঙ্গি নেতা। মেহমুদ জানায় ‘আলকায়দা আগেও ছিল, এখনও আছে। কাশ্মীরের জন্য যুদ্ধ করতে অনেক মুজাহিদিনই পাকিস্তানের দিকে চলে আসে কিন্তু পাকিস্তানি সেনা তাদের সেই অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য করে।
চলতি বছরের গোড়ার দিকেই এই উপমহাদেশের আল কায়েদার সেকেন্ড-ই-কমান্ড উসামা মেহমুদ’এর একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন যে, সংগঠনের লক্ষ্যই হল পাকিস্তান, কাশ্মীর, ভারত, বাংলাদেশ ও গোটা উপমহাদেশকেই ‘ইসলামিক উপমহাদেশ’এ পুনর্গঠন করা’।
আলকায়দার এই নতুন হুমকি বার্তা প্রকাশ্যে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থানগুলিতে নিরপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কলকাতার পাশাপাশি দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বাইয়েও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত কাশ্মীরে বিভিন্ন জেহাদী সংগঠনের কাছে পৌঁছাতে এবং কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে আরও বেশি করে দেশের প্রতি উদ্ধুব্ধ করতেই আলকায়েদা তাদের এই নতুন ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। কারণ গত বছরের ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যু এবং ২০১৩ সালে সংসদে হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত আফজল গুরুর ফাঁসির নির্দেশের পর উপত্যকায় একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। তারা ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক সংলাপের বদলে শরিয়ত বা ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, গত কয়েক বছর মধ্য প্রাচ্যের আরেকটি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর উত্থানের ফলে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় আল-কায়েদার সংগঠনটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু অতি সম্প্রতি আইএস বিরোধী অভিযান অত্যন্ত জোরালো হয়ে উঠেছে এবং তারা যখন ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে-সেই জায়গা দখল করতেই আল কায়েদা নতুন করে নিজেদের শক্তিকে জানান দিতে চাইছে।
বিডি প্রতিদিন/২৭ ডিসেম্বর ২০১৭/হিমেল