ইরানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সরকারি নীতিবিরোধী আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী তেহরানসহ অন্যান্য শহরেও। বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে, রবিবার ইরানের খোরামাবাদ, যানজান ও আহভাজ শহরে মিছিল থেকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেয়া হয়। এমনকি আবহার শহরে বিক্ষোভকারীরা তার ছবি-সম্বলিত সুবিশাল ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৩৮ বছর আগে ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের পর আয়াতুল্লাহ-র বিরুদ্ধে এই ধরনের বিক্ষোভ প্রায় নজিরবিহীন।
ইরান সরকার বলছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই আন্দোলন হচ্ছে না। আর যদি সেটা হতো তাহলে জিনিসপত্রের দামের বিরুদ্ধে আন্দোলনই হত, সেখান থেকে রাজনৈতিক স্লোগানও উঠত না, কিংবা সরকারি সম্পত্তি ও গাড়িতে আগুনও ধরানো হত না
এদিকে, বিক্ষোভকারীদের প্রতি কর্তৃপক্ষ কীভাবে সাড়া দেয় এর প্রতি পুরো বিশ্ব নজর রাখছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে ইরানের জনগণ এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও সরকারের দুর্নীতি অবসানের দাবির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। ইরানের বিক্ষোভে তাৎক্ষণিক মার্কিন প্রতিক্রিয়াকে দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
ইরানে সরকারবিরোধী চলমান বিক্ষোভের নেপথ্যের কারণ খুঁজতে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মারান্ডির সাক্ষাৎকার নিয়েছে আল-জাজিরা। বিক্ষোছের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইরানে অর্থনৈতিক সঙ্কট রয়েছে। চূড়ান্ত পরমাণু সমঝোতার (জেসিপিও) পর দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে প্রত্যাশ করেছিল জনগণ। কিন্তু বারাক ওবামার পর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ভিসা নিষিদ্ধসহ নিষেধাজ্ঞা আরোপে নতুন নতুন আইন পাস করে জেসিপিও বারবার লঙ্ঘন করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বেশ কিছু শহরে ব্যাপক আকারে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কোনো কারণ স্পষ্ট না করলেও অর্থনৈতিক সংকটকে একটি ব্যাপার হিসেবে দেখছেন মারান্ডি। তার মতে, ইরানিরা অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ এবং তারা যা করতে চাচ্ছেন তাতে বাধার মুখে পড়ছেন। তিনি আরও বলেন, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞাও একটি কারণ।
এই বিক্ষোভে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দ্রুত প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মারান্ডি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে যখন বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ হচ্ছে তখন ট্রাম্পের এ হঁশিয়ারি বেশ মজার। অধ্যাপক মারান্ডির মতে, দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ ইয়েমেনে ব্যাপক গণহত্যায় সৌদি আরবকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আবারও সিরিয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত চরমপন্থীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং ইরানের মানবাধিকারের ব্যাপারে কথা বলাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেমানান।
এদিকে, ইরানের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে আমরিকা জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমা বিশ্লেষক ও 'পলিটিক্স ফার্স্ট' নামের একটি লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক মারকাস পাপাদোপুলোস।
ইরানের প্রেস টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মারকাস বলেন, ইরানের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে আমেরিকা জড়িত। তার দাবি, ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর থেকেই দেশটিকে গোলযোগপূর্ণ দেশে পরিণত করার চেষ্টা করে আসছে আমেরিকা।
বিডি-প্রতিদিন/০১ জানুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব