যুক্তরাষ্ট্র আজ থেকে ১৭ বছর আগে তালেবান ও আল কায়দা সন্ত্রাসীদের দমনের অজুহাতে আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে ওই দেশটি দখল করে নিয়েছিল। এতো দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সেনারা আফগানিস্তানে অবস্থান করলেও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। প্রায় ১৬ হাজার মার্কিন সেনা সেদেশে মোতায়েন রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর দেশটির কোনো কোনো সরকারি সূত্র জানিয়েছে, আফগানিস্তান থেকেও সাত হাজার সেনা প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আফগান কূটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
মার্কিন সেনা প্রধান জোসেফ ড্যানফোর্ড আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সেদেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার গুজব মাত্র এবং তারা আগের মতোই আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকবে। আফগানিস্তানে ন্যাটো কমান্ডার জেনারেল অস্টিন ইস্কাট মিলার বলেছেন, ওই দেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কোনো নির্দেশ এখনো আমরা পাইনি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তানে মোতায়েন বিদেশি সেনা কমান্ডাররা সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অস্বীকার করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নীতি নিয়েছেন তাতে বোঝা যায় বিদেশের মাটিতে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের পর্যায়ক্রমে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর এবং আফগানিস্তান থেকেও সেনা প্রত্যাহারের আভাস দেয়ার পর মার্কিন সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। এরই জের ধরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাথিস পদত্যাগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তীব্র মতপার্থক্যের কারণে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। ম্যাথিস সিরিয়া ও আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত পদত্যাগপত্র জমা দেন।
আফগানিস্তানে যুদ্ধের ফলাফল ও লাভক্ষতি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে বহুদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। আফগানিস্তানে ব্যর্থতা ও কোণঠাসা অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মার্কিন কর্মকর্তারা তালেবানের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে তালেবানকে আরো ছাড় দিতে রাজি হয়েছে ওয়াশিংটন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি বলেছেন, তালেবানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা চলছে এবং এর সঙ্গে আফগান শান্তি আলোচনারও সম্পর্ক রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি সেদেশে নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতেতো পারেনি বরং পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। আফগানিস্তান জবরদখলের ফলে কেবল সেদেশে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে এবং তালেবান ও দায়েশের মতো উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত শক্তিশালী হওয়া ছাড়া আর কোনো ফল বয়ে আনেনি।
বিডি প্রতিদিন/২৬ ডিসেম্বর ২০১৮/আরাফাত