চলতি বছরের জুন এবং জুলাই মাসের তিন সপ্তাহজুড়ে থাইল্যান্ডের একটি গুহায় ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচের আটকে পড়া, রোমাঞ্চকর উদ্ধার অভিযানের খবর সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল।
থাইল্যান্ডের মায়ে সাই এলাকায় সেই উদ্ধার অভিযানের পরে কী ঘটেছে? সেটাই জানতে গিয়েছিলেন বিবিসির এক সংবাদদাতা।
তিনি জানিয়েছেন, এক সময়কার নির্জন ভুতুড়ে গুহাটি এখন রীতিমতো পর্যটন স্থান হয়ে গেছে কেবলমাত্র ওই ঘটনার কারণে। একে কেন্দ্র করে সচল হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতির চাকাও।
জুলাই মাসে গুহার ভেতরের পানি বের করার জন্য বড়সড় সেচ কার্যক্রম শুরু করেছিল কর্তৃপক্ষ। তখন ঘণ্টায় কয়েক মিলিয়ন লিটার পানি বের করে ফেলা হয়, যে পানিতে আশেপাশের ফল আর সবজির ক্ষেত ডুবে গিয়েছিল। যাদের ক্ষেতখামার ডুবে গিয়েছিল, তাদের একজন ছিলেন আনারস চাষী আরচাউন মোপোআকু, সেখানকার পাহাড়ি একটি গোত্রের বাসিন্দা। তবে সেজন্য তিনি কোন অভিযোগ করেননি, বরং বেশ কিছুদিনের জন্য ক্ষেতখামারের কাজ বন্ধ করে রাখেন এবং বাঁশ কেটে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেন।
এখনো আরচাউনের আনারস বাগান অনাবাদী রয়ে গেছে। তবে এখন তার আর আনারস চাষ না করলেও চলছে। গুহা দেখতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে কমলা বিক্রি করছেন তিনি। গুহায় আটকে পড়ার ঘটনার পাঁচ মাস পরে সেই গুহাটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, আনারস বিক্রির চেয়ে গুহা দেখতে আসা লোকজনের কাছে কমলা বিক্রি তাকে অনেক বেশি লাভ এনে দিয়েছে।
উদ্ধার অভিযানের আগে এলাকাটি ছিল গা ছমছম করা নিরিবিলি। এখন লোকে লোকারণ্য এই এলাকায় ফুল বিক্রি হচ্ছে, গ্রিল করা মাংসের খাবার তৈরি হচ্ছে, স্যুভেনিরের দোকান বসেছে, আর বিশেষ করে লটারির টিকেটও বিক্রি হচ্ছে। একজন রেঞ্জার দর্শনার্থীদের সংখ্যার হিসাব রাখছেন। আগে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ জন দর্শনার্থী আসতেন। এখন প্রতিদিন আসেন ৬ হাজারের বেশি দর্শনার্থী। এখানে একটি প্রার্থণার কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সেটি হলো তিন মিটার উচ্চতায় ডুবুরি সামান গুনানের একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি, যিনি ওই কিশোরদের উদ্ধার অভিযানে গিয়ে মারা যান। যে স্থানে দাড়িয়ে সাংবাদিকরা ওই ঘটনাটি প্রচার করেছিলেন, সেখানে এখন একটি জাদুঘর তৈরির কাজ চলছে। অনেকেই মনে করেন, ১৩ জনের সবাই জীবিত উদ্ধার করে আনতে পারাটা অলৌকিক একটা ব্যাপার। সারা পৃথিবীর মানুষ একটি খারাপ ফলাফলের আশঙ্কা করছিল।
বিডি প্রতিদিন/কালাম