আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কথিত ভেনেজুয়েলান গ্যাং সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় আদালত অবমাননার ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ফেডারেল বিচারক জেমস বোয়েসবার্গ বুধবার এই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওইসব ব্যক্তিকে তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে দেওয়া হয়নি।
দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ওইসব ব্যক্তিকে তাদের অধিকারের বিষয়ে আদালতের রায় যথাযথ পালন না করার প্রতিকার সম্পর্কে এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে জবাব দিতে সময় দিয়েছেন বিচারক বোয়সবার্গ। তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ এবং এ সংক্রান্ত পদক্ষেপের ক্রমবর্ধমান আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। সর্বশেষ তাতে যুক্ত হলো এ ঘটনা।
১৫ মার্চ শেষের দিকে বোয়েসবার্গ একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তাতে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন শত্রু’ আইন প্রয়োগ করে নির্বাসন কার্যকর করতে পারে না।
উল্লেখ্য, বোয়েসবার্গ হলেন কলম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট আদালতের প্রধান বিচারক। যুদ্ধকালীন বিদেশি শত্রু আইন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নাগরিক নন এমন ব্যক্তিদের আটক বা নির্বাসিত করার সুযোগ দেয়। প্রেসিডেন্ট কেবল নাগরিকত্বের অবস্থার ভিত্তিতে শুনানি ছাড়াই এসব নির্বাসন কার্যকর করতে পারেন।
তবে বিচারক বোয়েসবার্গ নির্বাসনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সময় এল সালভাদরগামী ফ্লাইটগুলোকে ফিরে আসার নির্দেশও দিয়েছিলেন।
এই নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টা পর ১৬ মার্চ সকালে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে একটি এক্স পোস্টে দাবি করেন- তার দেশ ভেনেজুয়েলার গ্যাং ট্রেন ডি আরাগুয়ার ২৩৮ জন সদস্য এবং সালভাদোরিয়ান গ্যাং এমএস-১৩ এর ২৩ জন সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্রে কাছ থেকে পেয়েছে। বোয়েসবার্গের রায় সম্পর্কে একটি সংবাদের স্ক্রিনশটও পুনরায় পোস্ট করেন বুকেলে। এর ক্যাপশনে লিখেছেন- উফ! অনেক দেরি হয়ে গেছে। অভিযুক্ত গ্যাং সদস্যদের এল সালভাদরের একটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কারাগারে রাখা হয়েছে। এটি সন্ত্রাসবাদের বন্দিদশা কেন্দ্র (সেন্ট্রো ডি কনফিনামিয়েন্তো দেল টেরোরিজমো) বা সিইসিওটি নামে পরিচিত।
১৮ মার্চ তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে বোয়েসবার্গকে ‘র্যাডিক্যাল বাম পাগল’ বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প এবং তাকে অভিশংসনের আহ্বান জানান। তবে অভিশংসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের এই আহ্বান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, বিচারিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতবিরোধের জন্য অভিশংসন উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া নয়।
ওদিকে রায়ে বোয়েসবার্গ আরও দাবি করেন, সরকার যেন নির্বাসিতদের বহনকারী বিমানের উড্ডয়নের সময় প্রকাশ করে, যাতে নিশ্চিত করা যায় তার আদেশ অনুসরণ করে বিমানটি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে পারত কিনা। কিন্তু ২৪ মার্চ মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় প্রকাশ করে যে, ট্রাম্প প্রশাসন এই তথ্য দেওয়ার নির্দেশ এড়াতে ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার অধিকার’ ব্যবহার করছে।
৩ এপ্রিল বোয়েসবার্গ এক শুনানিতে তার আদেশ অবমাননার অভিযোগ তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বিচার বিভাগকে ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞার আদেশ লঙ্ঘন করেছে কিনা তা জানতে চাপ দেন। বিচার বিভাগ তা অস্বীকার করে বলে, নিষেধাজ্ঞার আদেশ দাখিল করার সময় বিমানগুলো ততক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে গেছে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসনকে অভিবাসীদের বহিষ্কারের অনুমতি দেয়। কিন্তু রায় দেয় যে, তাদের বহিষ্কারের আগে অবশ্যই আদালতের শুনানি নিতে হবে।
বুধবার ৪৬ পৃষ্ঠার এক রায়ে বোয়েসবার্গ লিখেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ‘আদালতের পক্ষে যথেষ্ট ছিল যে সরকার আদালত অবমাননা করেছে। এ অভিযোগে সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করার সম্ভাব্য আছে।
তিনি লিখেছেন, তার অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ সত্ত্বেও ওইসব ব্যক্তিদের নির্বাসনের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার আগেই দ্রুত এল সালভাদরে পাঠিয়ে দেয়। বোয়েসবার্গ লিখেছেন, সংবিধান ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারিক আদেশ অমান্য করা সহ্য করে না। সূত্র: আল-জাজিরা, সিবিএস নিউজ, দ্য হিল
বিডি প্রতিদিন/একেএ