ক্রিম, ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক ইত্যাদি প্রসাধনী নারীদের নিত্যসঙ্গী। ক্রিমের মধ্যে আবার রয়েছে বিভিন্ন ধরণ। অ্যান্টি এজিং ক্রিম, ব্রণ তাড়ানোর ক্রিম, ফর্সা হওয়ার ক্রিম ইত্যাদি। গর্ভাবস্তায়ও নারীরা বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু গর্ভবস্থায় এসব প্রসাধনীর ব্যবহার নবাগত শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন নারী প্রতিদিন ১২ ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। তবে গর্ভবস্থায় কিছু ধরনের প্রসাধনী এড়িয়ে চলাই ভালো। যদিও চিকিৎসকেরা এই ধরনের কোনও পরামর্শ দেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, রেটিনয়েডস, লেড, পারাবেনস বর্তমান প্রসাধনী ব্যবহার করলে দেহে হরমোনের পরিবর্তন দেখা যায় এবং এতে গর্ভজাত সন্তান বিকলাঙ্গ বা মানসিক ভারসাম্য হীন হতে পারে।
পারাবেনস নামক উপাদানটি প্রায় সব ধরনের প্রসাধনীতেই থাকে। যেমন- লোশন, ক্রিম, টোনার, ফাউন্ডেশন। প্রসাধনীর গায়ে এই নামের উল্লেখ থাকলে এটি ব্যবহার না করাই ভালো।
স্যালিসিলিক অ্যাসিড মূলত ব্রণ দহর করার ক্রিম, অ্যান্টি এজিং ক্রিমে ব্যবহার হয়ে থাকে যা মূলত মুখ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। অ্যাসপ্রিনে যেহেতু স্যালিসিত অ্যাসিড আছে তাই এটি ত্যাগ করাই ভালো। অতিরিক্ত অ্যাসপ্রিন ব্যবহার করলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।
রেটিলন হলো একধরনের ভিটামিন 'এ' যা বলিরেখা ও ব্রণ দূর করে ত্বকের কোলাজেনের সমতা বজায় রাখে। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন 'এ' সন্তানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় ভিটামিন 'এ' যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করবেন না৷
প্যাথালেটস ব্যবহার হয় নেইলপলিশ তৈরিতে। এছাড়াও এটি পারফিউম, বডি স্প্রে ও হেয়ার স্প্রেতেও ব্যবহার করা হয়। ২০০৫ সালের একটি পরীক্ষাতে দেখা গেছে, প্যাথালেটস যারা বেশি ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে গর্ভজাত জিনের ক্ষতিকর পরিবর্তন হয়।
গর্ভাবস্থায় এমন কোনও প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত না যা ত্বক দ্রুত শুষে নিতে পারে এবং রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় হেয়ার রিমুভাল ক্রিম, পারফিউম ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকেরই গায়ে প্রচুর অবাঞ্ছিত লোম থাকে। তারা নিরাপদ থাকতে চাইলে ওয়াক্সিং করিয়ে নিতে পারেন।
দাঁত সাদা রাখতে এখন টুথ পেস্টে প্রচুর পেরোক্সাইড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি একটি ব্লিচিং পদ্ধতি তাই এটি ত্যাগ করা উচিত। তবে হোয়াইটেনিং টুথপেস্ট গর্ভজাত সন্তানের উপর কি প্রভাব পরে তা চিকিৎকেরা বলতে না পরলেও গর্ভাবস্থায় এটি পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
সানস্ক্রিন লোশনে অক্সিবেনজোন থাকে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, অক্সিবেনজোন যুক্ত সানস্ক্রিন যারা ব্যবহার করে থাকেন তাদের সন্তানের ওজন কম হতে পারে। এছাড়াও ওই উপাদান হরমোনকে অনেক বেশি সংবেদনশীল বানাতে পারে। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে গা ঢাক জামা পরুন। তবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হলে জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড যুক্ত সানস্ক্রিন লোসন ব্যবহার করুন। এটি সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করবে এবং এটি রক্তে মিশবে না।
লিপস্টিক তৈরিতে লেড বা শিসা ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিসার ফলে ক্যানসার বা শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে। নামি কোম্পানির লিপস্টিকেও শিসা পাওয়া গেছে।
গর্ভাবস্থায় প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাই বলে সমস্ত প্রোডাক্টেই যে খারাপ উপাদান থাকে তা নয়। তবে সবচেয়ে ভালো উপায় যদি প্রকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যায়।
এ ছাড়াও গর্ভবস্থায় সময় হরমোনের পরিবর্তন হয় তাইমুখে ব্রণ ওঠে৷ সেসময় অ্যাকুটেন, রেটিন-এ ও টেট্রাসাইক্লিন ব্যবহারে সিসুর জন্মগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ওই সময় কোনও ওষুধ না খেয়ে নিমপাতা, হলুদ বাটা লাগাতে পারেন। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় নারীরা অ্যান্টি এজিং ক্রিম পেটে মেখে থাকেন। এমন না করাই ভালো। এক্ষেত্রে অলিভ ওয়েল ম্যাসাজ করুন। এসময় চুলে হাইলাইটস করবেন না। এছাড়াও প্রতিদিন ভিটামিন 'বি' কমপ্লেক্স খেতে পারেন।