সময়ের স্রোতে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন এ যুগের নারীরা। গৃহস্থালি থেকে শুরু করে কর্পোরেট হাউস পর্যন্ত বিচরণ করছেন তারা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক সময় পরিবারের বাধা সত্ত্বেও অফিসের চাহিদার জন্য পরতে হচ্ছে কর্পোরেট পোশাক। অনেকে আবার আধুনিকতার অজুহাতে মডার্ন পোশাকের নামে পরছেন উগ্র পোশাক, যা অনেক ক্ষেত্রে দেখতেও পরিবেশের সঙ্গে বেমানান। এ বিষয়েই আমাদের এ প্রতিবেদন।
চিত্র-১ : মাস চারেক হলো একটি কর্পোরেট হাউসে যোগ দিয়েছেন তিথি। কাল থেকেই তার মনটা ভালো নেই। শেষ বেলায় অফিসে ঘটে গেল বিশাল এক কাণ্ড। ঘটনার সূত্রপাত তার পোশাক-পরিচ্ছদকে কেন্দ্র করেই। বরাবরের মতো গতকালও তিনি অফিসে পরে এসেছিলেন টপসের সঙ্গে ক্যাপ্রি। ব্যস ... তারপর সহকর্মীর কটূক্তি এবং ঝগড়া। অফিসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি নিত্যনতুন বাহারি রংয়ের পোশাক পরে এসেছেন। কিছুদিন ধরে তিনি খেয়াল করছেন তার পেছনে তার সহকর্মীরা কটুক্তি করে। যা শুনেও তিনি না শোনার ভান করেন। ইতোমধ্যে তিথির পরিবার থেকেও শ্বশুর-শাশুড়ি তার পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এ ব্যাপার নিয়ে স্বামী ও তার স্কুলপড়ুয়া ছেলের সঙ্গেও কথা কাটাকাটি হয়েছে।
চিত্র-২ : আজ তিন মাস যাবত্ একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে বিজনেস এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি করছেন ইতি। বিয়ের আগে থেকেই তিনি শাড়ি পরতে অভ্যস্ত। যে কোনো পার্টিতে শাড়িকেই তিনি প্রাধান্য দেন। কিন্তু প্রায়ই অফিসের কাজে যেতে হয় লেটনাইট পার্টিতে। সবসময় সেখানে ট্র্যাডিশনাল শাড়িতে মানায় না। বাধ্য হয়ে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরতে হয়। এতে করে তার যৌথ পরিবারের ৫ জনের ৫ রকম মন্তব্য শুনতে হয়। প্রতিদিনের এই ঝামেলা আর ভালো লাগে না। তিথি ও ইতির সমস্যাগুলো খুব সহজভাবেই সমাধান করা সম্ভব। নিজেরা যদি একটু সচেতন ও আপসমনা হতে পারি তাহলেই তা সহজ হবে।
কি করবেন : প্রথমেই স্বামীর সমর্থন আদায় করুন। আধুনিক পোশাক যেমন শর্ট স্কার্ট, ক্যাপ্রি ও জিনস পরার অনুমতি নিন। বাড়িতে মাঝে মাঝে এসব পোশাক পরতে পারেন। এতে করে ব্যাপারটা সহনীয় হয়ে যাবে।
শ্বিশুর বাড়ির প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলুন। ওয়ান টু ওয়ান ডিসকাশনে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করুন। একসময় তারা বুঝবে মানুষের ব্যক্তিত্বই আসল। কোনো বিশেষ পোশাক দিয়ে বিচার করা যায় না।
পরিবারের সবার আস্থা অর্জনের চেষ্টা করুন। বাড়িতে আপনার নিজের বয়সী কেউ থাকলে তাকে বশ করে আপনার সমস্যা খুলে বলুন। চেষ্টা করুন তার মাধ্যমে অন্য সদস্যদের আপনার সম্পর্কে বুঝিয়ে তোলা।
পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে নিজের সমস্যা খুলে বলুন। প্রয়োজনে আপনার কর্মস্থলের কাউকে নিয়ে আসুন। তাতে করে তারা স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টাকে তুলে ধরতে পারবেন। পরিবারের পছন্দমতো পোশাক পরুন। তাদেরও একটু সময় দিন। দেখবেন অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নিজের অন্য গুণ ও স্বভাব দিয়ে সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠুন, তাহলে তারাও গুরুত্ব দেবেন আপনার পছন্দ ও অপছন্দকে।
অতিরঞ্জিত কোনো পোশাক পরে অফিসে যাবেন না। যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার আড়ালে কেউ কথা বলবে না।
কি করবেন না : শ্বশুর বাড়ির লোকজন পুরনো দিনের মানুষ। হয়তো দেরিতে বুঝবেন তাই অল্পেই অধৈর্য হবেন না। ওদের মনে কোনো আঘাত দিয়ে ইচ্ছা আদায় করবেন না। ‘অন্য বাড়িতে এই স্বাধীনতা আছে, এই বাড়িতে নেই’— এরকম কোনো মন্তব্য করে পরিবারের লোকজনকে আপনার বিরুদ্ধে উস্কে দেবেন না। এতে করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। যিতটা সম্ভব মার্জিত ও শালীনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করুন। অতিমাত্রায় মেকাপ করে সবার কাছে হাসির পাত্র না হওয়াই ভালো। চেষ্টা করুন সহজ ও সাবলীলভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে। অিন্য সহকর্মীকে জোর করে আপনার মতো আধুনিক পোশাকে অভ্যস্ত হওয়ার উপদেশ দেবেন না। এতে করে আড়ালে আপনার বিরুদ্ধেই অন্যের কাছে নালিশ করবে। আপনার যেরকম পোশাকে স্বাধীনতা রয়েছে আপনার সহকর্মীরও সেরকম স্বাধীনতা রয়েছে। মনে রাখবেন মডার্ন পোশাক মানেই উগ্র পোশাক নয়।