বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, পর্যাপ্ত সংস্কার ও হাসিনার বিচার সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচন দিলে আমরা সে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। আমাদের দলের আমির ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। নতুন স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
আজ শুক্রবার সকালে কুমিল্লার লাকসামে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
লাকসাম পৌর জামায়াতের আমির জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এই কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যের মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, অহংকারী, অত্যাচারী শাসকের পরিণতি কী হতে পারে, হাসিনাকে দেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিখতে হবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, নির্বাচনে আমাদের অবস্থান নিয়ে অনেকে ভুল বোঝার চেষ্টা করছেন। আমাদের আমির-ই-জামায়েত কালকেও বলেছেন, সরকার বলেছে নির্বাচন ২৬ শে জুন অথবা ২৫ ডিসেম্বর। আপনি যে সময় বলেন নির্বাচন করেন। কিন্তু প্রো ভায়োলেন্স ১৪, ১৮ ও ২৪ এর মতো নির্বাচন হলে এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। এই সম্মেলনের কেউ নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই এবং জেল খাটেনি। সংবিধানের ৩৬-৩৯ ধারায় বলা আছে বাক স্বাধীনতার কথা। কিন্তু বিগত স্বৈরাচার সরকার মানুষের সেই অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি।
১৪, ১৮ ও ২৪ এর নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল তারা। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট দিয়ে দিয়েছে বিগত সরকার। আর এসব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
শেখ হাসিনার বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, হাসিনা যাকেই তার ক্ষমতার জন্য আতঙ্ক মনে করতো, তাকেই রাজাকার বানিয়ে দিতো। অধিকার চাওয়া শিক্ষার্থীদেরও রাজাকার বলেছিল হাসিনা। হাসিনাকে ভারত বলেছিল মুসলমান নেতারাই তার ক্ষমতার জন্য আতঙ্ক। তাই ভারতের প্রেসক্রিপশনে জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছিল।
তিনি বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে জনগণ হাসিনাকেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনে ২ হাজার ছাত্র-জনতার জীবন, ৩০ হাজার আহতের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জণগণকে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। বিএনপি ও জামায়াত যেভাবে গত ১৬ বছর নির্যাতন সহ্য করে আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনাকে উৎখাত করেছে, সেভাবেই সামনে যেকোনো জাতীয় ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কোরআন ও সুন্নাহর আইন ছাড়া, মানব রচিত সংবিধান মানুষের কল্যাণ সাধিত করতে পারে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোরআন-সুন্নাহর আলোকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। এতেই জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
এ সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মু. আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমীর অ্যাডভোকেট মু. শাহাজাহান, সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. সৈয়দ একেএম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ডা. আব্দুল মুবীন, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপত মু. ইয়াছিন আরাফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মহিউদ্দিন রনি সহ স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল