বদলে গেছে ছিনতাইয়ের ধরণ-ধারণ। ছিনতাইয়ের কৌশল হিসেবে মাঠে নামানো হয়েছে নারী ছিনতাইকারিদের। বর্তমানে সারাদেশে সক্রিয় নারী ছিনতাইকারীদের শতাধিক শক্তিশালী চক্র। শুধু বাসে, ট্রেনে, রাস্তায় বা শপিং মলে ছিনতাই নয়, প্রেমের ফাঁদ পেতে বিত্তশালীদের কাছ থেকে কাড়ি কাড়ি অর্থ হাতিয়ে নিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী ছিনতাইকারিদের।
গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক নারী ছিনতাইকারী গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কোন কোন চক্রে শুধু নারীরাই সদস্য। কোথাও পুরুষ ছিনতাইকারিরা নারীদের ছিনতাইয়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। পরিচয় ঢাকতে এক জেলার বাসিন্দারা অন্য জেলায় গিয়ে ছিনতাইকারী চক্রে যোগ দিচ্ছে। গ্রেফতারের পর এসব নারী ছিনতাইকারীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন শপিংমল, নিরিবিলি সড়ক, বিয়ে অনুষ্ঠান, পার্টিই তাদের ছিনতাইয়ে মূল কেন্দ্রস্থল। এছাড়া অনেক সময় মোবাইলে প্রেমের ফাঁদ পেতে নির্জন ফ্লাটে ডেকে আনা হয় বিত্তশালীদের। তারপর ব্লাকমেইল করে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এবং চকবাজার এলাকা থেকে রোজী আক্তার (২৬), ফাতেমা বেগম (২৫), রাশিদা বেগম (১৮) ও মুন্নি বেগম (২৫) নামে চার নারী ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে রোজী ছিনতাইকারী চক্রের নেতা বলে পুলিশ জানায়। পাঁচলাইশ থানার ওসি আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, “গ্রেফতারকৃত নারীরা নগরীর কোলাহলপূর্ণ বিভিন্ন স্থান এবং শপিং মলে মোবাইল ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।”
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার ‘কিং অফ চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে’ একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে এক মহিলার ব্যাগ ও মোবাইল ছিনতাই করে রাশিদা ও মুন্নি। এ ঘটনায় তাদের দুজনকে ধরে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গভীর রাতে চকবাজারের ওমর আলী মাতুব্বর রোডের একটি বাসা থেকে ফাতেমাকে গ্রেফতার করে ৪০ হাজার টাকাসহ ছিনতাই হওয়া ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়। পরে ফাতেমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভোরের দিকে একই এলাকার অন্য একটি বাসা থেকে রোজীকে গ্রেফতার এবং ছিনতাই হওয়া মোবাইল দুটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসি ফারুক।
এ ঘটনার দুইদিন আগেই গত বুধবার ভোরে মৌলভীবাজার শহরের কোদালিছড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তিন নারী ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। আটক তিন ছিনতাইকারী হলেন, আউলিয়া খাতুন (৩৫), অনুফা বেগম (৩০) ও পারবিন আক্তার (২৫)। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর এলাকায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এর দুইদিন আগে সোমবার সিলেটের সুরমা পয়েন্ট ও কিন ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ নারী ছিনতাইকারীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ জানায়, আটককৃত মালা আক্তার (২০), সুমি বেগম (২৫), নূরজাহান বেগম (৪৩), তিশা (২৫) ও জামেলা বেগম (২৬) দীর্ঘদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। ব্যস্ততম এলাকা ও বিপণী বিতানে পুরুষ ও মহিলাদের টার্গেট করে এরা পকেট মেরে থাকে। রাতে কিন ব্রিজের নিচে লোকজনকে হেনস্থা করার পাশাপাশি ছিনতাইও করে থাকে।
গত বছর ১২ অক্টোবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে অভিযান চালিয়ে ২৪ ঘন্টায় ২৭ জন ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ, যাদের মধ্যে ২৬ জনই নারী। আটক করা হয় সকিনা বেগম (৩২), স্বপ্না বেগম (২৫) আলসুমা বেগম (২৪), সুহেনা আক্তার (২০), আসমা বেগম (২০), রোজিনা বেগম (২৫), হোসনা বেগম (৩২), রিনা বেগম (২৮), হালিমা বেগম (৩২), মিনারা বেগম (৪৫), পারভিন আক্তার (১৮), মেহের চান (৩৫), নাজমিন আক্তার (১৮), সাহেনা বেগম (২৮), রুজিনা বেগম (২২), কুলছুমা বেগম (৩৫), সালমা বেগম (২১), হোসনা বেগম (২৩), সাহেদা খাতুন (৩০), আলেমা বেগম (২৩), সুফিয়া বেগম (৩৫), মিতু বেগম (২১), পারভিন (২০), আঙরা বেগম বেগম (৪৫), বানেছা বেগম (৪৫), জোসনা বেগম (২৩) ও শিবলু মিয়াকে (৪১)।