বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় গত ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত 'বৌদ্ধ মন্দিরে রাষ্ট্রদূত মুনার প্রার্থনা!' শীর্ষক প্রতিবেদনটির প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্যাংককস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।
দূতাবাস প্রতিবেদনটির তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে উল্লেখ করে প্রতিবাদ পত্রে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে একটি প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল লক্ষ্য। থাইল্যান্ড এবং কাম্বোডিয়ার মত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে বাংলাদেশের বৌদ্ধ কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মাধ্যমে কুটনৈতিক সম্প্রীতি জোরদার করা এবং সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সার্কিট পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ানো দূতাবাসেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত 'Buddhist Heritage and Pilgrimage Circuits' সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় ব্যাংককস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশকে বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এলক্ষ্যে দূতাবাস গত ৯ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে, দুতাবাসের ৪০তম বর্ষ পূর্তি এবং থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবলের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে 'আসিয়ান বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন' -এর সহযোগিতায় একটি সেমিনার ও রাজার সু-স্বাস্থ্য কামনায় একটি বৌদ্ধ প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানটিতে থাইল্যান্ডের দুজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, দু’দেশের বৌদ্ধ ধর্ম গুরু আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এবং থাইল্যান্ডে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ এবং থাইল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশীগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহন করেন। অনুষ্ঠানটি থাইল্যান্ডের সরকার, জনগণ ও মিডিয়ার কাছে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়।
আশা করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সাথে থাইল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে যেমন: থাইল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক পার্মিট ভিসা সহ থাই ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণ, থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের শ্রম রপ্তানীর সম্ভাবনা, বানিজ্য বৃদ্ধি ও আসিয়ান বুদ্ধিস্ট দেশগুলোর সাথে অংশিদারিত্ব জোরদার করনে দূতাবাসের এই উদ্যোগ সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থাইল্যান্ডে কূটনীতিকদের কতিপয় রীতিনীতি মেনে চলার প্রটোকল রয়েছে যা দেশটির স্পর্শকাতর রাজকীয় ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সাথে সম্পৃক্ত। বিষয়টি একান্তই স্বাগতিক দেশে কুটনীতিক পেশাদারিত্বের অংশবিশেষ এবং রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত স্বার্থ অথবা ধর্মবিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত নয়। ছবিতে থাইল্যান্ডে কর্মরত আর দশটি ভিন্নধর্মী রাষ্ট্রদূতের মতই, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাইল্যান্ড-এর একজন বিখ্যাত ধর্মগুরুকে থাই সাংস্কৃতিক রেওয়াজ অনুযায়ী ‘সোয়াদিকা’র ভঙ্গিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, উপাসনা করছেন না। ছবিটিকে প্রতিবেদনে শুধুমাত্র জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান রাষ্ট্রদূত ধর্মীয় সম্প্রীতি উৎসাহিত করার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদানের জন্য থাইল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে, থাইল্যান্ডের যুবরাজ এবং রাজকুমারী থেকে বিশেষ স্বীকৃতির উপহার পেয়েছেন যা বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বিরল অর্জন।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: নির্ভরশীল সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও ছবির ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অসাম্প্রদায়িক নীতিতে অবিচল রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এক্ষেত্রে আপোষহীন থাকবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ ডিসেম্বর ১৫/ সালাহ উদ্দীন