মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর আপিলের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
বিচারকদের স্বাক্ষরের পর বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬১৪ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
সুপ্রিমকোর্টের নিদের্শনা অনুযায়ী, আপিল বিভাগে রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড দেয়া হয়। যাবজ্জীবন বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত’ কারাবাস বোঝাবে বলে ব্যাখ্যা দেয় আদালত। এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
এই মামলায় সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল ছিল। আদালত উভয়টির আংশিক মঞ্জুর করেছে। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।
একাত্তরে ভূমিকার কারণে ‘দেইল্যা রাজাকার’ নামে খ্যাত এই জামায়াত নেতার সাজা কমানোর আদেশ আসায় আপিলের রায়ের পর আদালতের বাইরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই জামায়াত নেতার ছেলে মাসুদ সাঈদী ও আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, তারা খালাস আশা করেছিলেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, তারা প্রত্যাশিত রায় পাননি। তবে এই রায়েও ‘ধর্মীয় নেতা’ হিসাবে সাঈদীর মুখোশ খুলে গেছে। তবে সর্বশেষ গত ২৩ অগাস্ট নিজের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ চেয়ে রিভিউ পিটিশন করা হবে।”
বিডি-প্রতিদিন/৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব