ঢাকার আশকোনায় জঙ্গি আস্তানা তৈরি করতে মোহাম্মদ ইমতিয়াজ নামে যে ব্যক্তি ফ্লাট ভাড়া নিয়েছিলেন সে-ই নব্য জেএমবি'র পলাতক নেতা মুসা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তার খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ওই আস্তানায় মারা যাওয়া বা গ্রেফতার হওয়া কারো মধ্যে এই মোহাম্মদ ইমতিয়াজ নেই। বাড়িওয়ালার মেয়ে জোনাকি রাসেলের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। খবর বিবিসি বাংলার।
জোনাকির বর্ণনামতে, মোহাম্মদ ইমতিয়াজ নামে যে ব্যক্তিকে ফ্লাট ভাড়া দেয়া হয় তিনি শ্যামবর্ণ, দীর্ঘদেহী, স্বাস্থ্যবান, শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখমণ্ডল এবং চোখে চশমা পরেন। তিনিই গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার আশকোনায় সূর্য ভিলা নামক নবনির্মিত ত্রিতল ভবনটির নিচ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন।
পিতা বিদেশে থাকায় জোনাকি রাসেল বাড়িটি দেখভাল করেন। তিনিই ইমতিয়াজের কাছে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন। সূর্য ভিলার তিন তলায় থাকেন তার মা এবং এক বোন। তিনি থাকেন পাশে তার শ্বশুরালয়ে।
জোনাকি রাসেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''ইমতিয়াজ, তার স্ত্রী, চল্লিশ দিন বয়স্ক সন্তান এবং আরেক মহিলা—মোট চার জন থাকার কথা ফ্ল্যাটটিতে। বাসা ভাড়া নেয়ার শর্ত হিসেবে সবার জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করেন ইমতিয়াজ। ভাড়াটিয়া ফর্মও পূরণ করে জমা দেন। সেগুলো থানায় জমাও দেয়া হয়েছে। বাড়ি ভাড়া নেয়ার পর তারা যথাসময়ে বাসায় ওঠেন। কিন্তু কখনো খুব একটা বাইরে বের হতেন না। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে উনারা হিজড়ার অজুহাত দিতেন। বলতেন ছোট বাচ্চা আছে, হিজড়ারা অনেক বিরক্ত করে। সামনের বাসা থেকেও নাকি তারা দশ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।"
"আমি যতবার গেছি তখন ছোট বেবি আর ওয়াইফটাই ছিল।''
যে কিশোরটি পুলিশী অভিযান বাসার মধ্যে নিহত হয়েছে, তাকে কখনো দেখেননি বলে জানান জোনাকি রাসেল, এমনকি যে নারী আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন তাকেও তিনি দেখেননি।
তবে মোহাম্মদ ইমতিয়াজের সঙ্গে অনেকবারই দেখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, "অনেক সময় ভাড়া নেয়ার জন্য যেতাম, তখন উনি দরজা খুলতেন। ভাড়াটা দিতেন। অনেক সময় পানি না থাকলে বলতেন, পানি নাই।''
পুলিশের হিসেবে ওই ফ্ল্যাটটিকে বিভিন্ন সময় নিহত অভিযুক্ত জঙ্গিদের স্ত্রী ও সন্তানদের একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হত, যেটির ব্যবস্থাপনায় ছিল এই কথিত মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। কিন্তু জোনাকির বর্ণনামতে ওই ভবনে নিহত, আহত ও গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে সেই ইমতিয়াজ নেই।
তাহলে কে এই ইমতিয়াজ? কোথায়ই বা গেল সে?
ধারণা করা হচ্ছে সে ভাড়াটিয়া হিসেবে যে পরিচয়পত্র সরবরাহ করেছিল তা জাল। পুলিশ বলছে, সে পলাতক, তাকে খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, ''আশকোনার ওই বাড়িটি থেকে শনিবার যে দু'জন নারীকে আটক করা হয়েছে, তাদের নিয়েই এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা যাকে খুঁজছি, নব্য জেএমবির আরেকজন নেতা, মুসা, সে-ই ইমতিয়াজ নাম নিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল।''
এ ব্যাপারে কিছু গোয়েন্দা তথ্যও পুলিশের কাছে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এখন অভিযান চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শনিবারের অভিযানের সময় আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে এই অভিযুক্ত মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা এবং তাদের কন্যাও রয়েছে বলে পুলিশ এর আগে জানায়।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ