বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দিতে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও চলতি বছরে সময়মতো সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এছাড়া নিম্নমানের কাগজ ও পাঠ্যবইয়ে নানা ভুলভ্রান্তি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ পার হলেও বিদেশে ছাপানো প্রাথমিকের ৪৭ লাখ বই এখনো বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। দরপত্রে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী বই সরবরাহ করতে পারেনি দেশি অনেক মুদ্রাকরও। অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে একটি-দু'টি বই তুলে দিয়ে সান্তনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এসব বইয়ের নিম্নমানের কাগজ অতীতের সব রেকর্ড যেন ছাড়িয়ে গেছে।
জানা গেছে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য এবার মোট ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই ছাপানোর কথা। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপিয়েছেন দেশীয় মুদ্রাকরেরা। আর প্রাথমিক স্তরের ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২টি বই ছাপানো হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে। দেশীয় মুদ্রাকরের পাশাপাশি এবার বই ছাপানো হয়েছে ভারত ও চীনে। দরপত্র অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বই পৌঁছানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বিদেশে ছাপানো প্রাথমিক স্তরের ৪৭ লাখ বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। পৌঁছায়নি দেশীয় অনেক মুদ্রকরের ছাপানো বইও। এ কারণে অনেক জেলায় আপদকালীন মজুত থেকে বই পাঠিয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসব করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে একটি-দু'টি বই তুলে দিয়ে ফটোসেশনের মাধ্যমে বই উৎসব পালন করা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুরনো বই।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ভারতের শীর্ষাসাই বিজনেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৪৭ লাখ বই ছাপার কাজ করে। সেই বইগুলো এখনো এসে পৌঁছায়নি। এছাড়া সরকার প্রিন্টার্স নামের দেশি একটি প্রতিষ্ঠান নামে-বেনামে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ বই ছাপার কাজ নিলেও গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা নয় লাখ বই দিতে পারেনি। সময়মতো বই সরবরাহ করতে না পারায় ৭২টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের ৩৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অত্যন্ত নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করায় ম্যাপ, আল নুর, হাক্কানি ও গাজীপুর পেপার মিল নামে চারটি প্রতিষ্ঠানের ৩৬ কোটি টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে।
তবে ভারতে ছাপানো প্রায় অর্ধকোটি বই না আসা প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেছেন, বইগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে আগেই। ইতোমধ্যে খালাস হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে স্কুলে পৌঁছে যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ