আজ সারাদেশে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। মঙ্গলবার দিনাজপুর জেলায় সর্বনিম্ন ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। সবশেষ ১৯৫৩ সালে ঢাকায় তাপমাত্রা নেমেছিলো ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে।
এদিকে শীতজনিত কারণে কুড়িগ্রামে এক সপ্তাহে ১১ জন, নওগাঁয় একজন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন।
আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী, গতকাল সৈয়দপুর জেলায় দেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে ২৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নীলফামারীর ডিমলায় ছিল ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩ এবং দিনাজপুরে তাপমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূত্র জানায়, রংপুরের পর শীতের তীব্রতা বেশি রাজশাহী বিভাগে। এই বিভাগের সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী জেলায় ছিল ৫ দশমিক ৩, বগুড়া ও ঈশ্বরদীতে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ১৮.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, তীব্র শীতে ডিএসসিসির বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় ১৬ হাজারের বেশি রোগীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৬ হাজার ১৬৫ জন রোগীকে বাড়ি গিয়ে ওষুধসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ সেবা আগামী ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দিনের বেলায়ও কুয়াশার রেশ কাটছে না। এর সঙ্গে উত্তর দিক থেকে আসছে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
নীলফামারী : প্রচণ্ড শীতে কাঁঁপছে উত্তরের জেলা নীলফামারী। ফলে জবুথবু হয়ে পড়েছে মানুষসহ গবাদি পশু। স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগুনের উত্তাপ নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন মানুষজন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে রেখে জেগে রাত কাটাচ্ছেন। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি কাহিল হয়ে পড়েছেন বয়স্ক ও শিশুরা।
পঞ্চগড় : ঘন কুয়াশা, পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় পঞ্চগড়ের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিনে সূর্যের দেখা না পাওয়া এবং রোদ না থাকার কারণে এই এলাকার তাপমাত্রা সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। এ ছাড়া হিমালয়ান আবহাওয়ার প্রভাবে তীব্র কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসে হাড় কাঁপানো শীত নেমেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়েছে। খরকুটো জ্বালিয়ে তারা কোনোমতে শীত নিবারণ করছেন। অব্যাহত ঠাণ্ডা ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
কুড়িগ্রাম : হিমেল হাওয়া আর তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন কুড়িগ্রাম জেলার সাধারণ মানুষজন। এক সপ্তাহে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর আগমন অনেক বেড়েছে। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ারুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, এক সপ্তাহে এই হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বদরগঞ্জ (কুড়িগাম) : রংপুরের বদরগঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার সঙ্গে লু-হাওয়ায় মানুষের অবস্থা এখন ত্রাহি ত্রাহি। কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এবং সকাল ১০টা পর্যন্ত কেউ-ই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এ সময় চারদিক থাকছে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন।
নওগাঁ : দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোসাগর এবং তত্সংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নওগাঁয় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এদিন সকালে নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ মেরিগোল্ড পাড়ায় শীতজনিত কারণে আবদুস সোবহান শেখ (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রচণ্ড শীতে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে শহরের আনন্দ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে ওই ব্যক্তি বাজার করতে এসে ঠাণ্ডায় শ্বাসকষ্টের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার পকেটে শ্বাসকষ্টের ইনহেলার পাওয়া গেছে।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন শ্রীমঙ্গলের সাধারণ মানুষ। গতকাল স্থানীয় আবহাওয়া অফিস থেকে শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। শীতের তীব্রতা বাড়লেও সরকারি সাহায্য প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদ্দুজানান জানান, এ পর্যন্ত ৩৫০০ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩০০০ পিস বিতরণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, আরও কম্বলের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
দিনাজপুর : হাড় কাঁপানো কনকনে ঠাণ্ডা আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছেন দিনাজপুরবাসী। গতকাল ভোররাত থেকে ভারী কুয়াশায় ঢেকে যায় জেলার সব এলাকা। তবে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সূর্যের মুখ দেখা দেওয়ার পর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তীব্র শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। উত্তর জনপদে তাপমাত্রা কমতে কমতে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নাটোর : নাটোরে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা কমছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত নিবারণ করতে অনেককেই প্লাস্টিক ও পরিত্যক্ত কাগজসহ খড়কুটো জ্বালিয়ে রাখছেন। নাটোর আধুনিক হাসপাতালে শীতজনিত রোগির সংখ্যা বেড়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২ জানুয়ারি থেকে হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ফলে কমছে তাপমাত্রা। প্রায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা নিচের দিকে নামছে। গতকাল তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিরাজগঞ্জ : কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ার কারণে তীব্র শীত নেমে এসেছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের মানুষ। সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, মেছড়া, কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী, শুভগাছা, গান্ধাইল, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, মনসুরনগর, বেলকুচি ও চৌহালীর চরাঞ্চল এবং চলনবিলাঞ্চলের তাড়াশ-উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও শাহজাদপুরের কয়েক লক্ষ মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন।
বগুড়া : হাড় কাঁপানো শীতে বগুড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের মৃদু শৈত্য প্রবাহে শীত বাড়ছে। ফলে দিনের অর্ধেক সময়জুড়ে কোথাও সূর্য্যের দেখা মিলছে না। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো জড়সড় হয়ে পড়েছেন। দিনের বেলাও থাকছে প্রচণ্ডশীত। সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে শহরের মানুষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরছেন। বগুড়ার শহরতলী দুপুর পর্যন্ত থাকছে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, গতকাল বগুড়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্র ছিল ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সব্বোর্চ ছিল ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন ডায়রিয়ায় এবং ৬ জন শিশু ও বৃদ্ধ শ্বাস কষ্টজনিত রোগে হাসপতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে আরো প্রায় অর্ধশত ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জানা গেছে, বগুড়ার সকল উপজেলায় শীত জেঁকে বসেছে। শীতের কারণে শহরের ফুটপাত ও হকার্সসহ বিভিন্ন মার্কেটে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে।
আদমদীঘি (বগুড়া) : তীব্র শীতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ব্যাধি- বিশেষকরে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ বেড়েছে। বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চাষিরা বলছেন, এ আবহাওয়ায় আলু, সরিষা, ধানের চারা, মশুর ডাল ও সবজির ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, একটানা শৈত্য প্রবাহ এবং পৌষের কনকনে শীতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এবং ফসল উৎপাদনকারীরা। বিশেষ করে আলু, সরিষা, মসুর ডাল, ধানের চারা ও সবজি চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। চার দিন ধরে চলছে এ অবস্থা। এ ছাড়া ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। আবহাওয়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ তাপমাত্রা আরও দু-এক দিন থাকতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/ ০৯ জানুয়ারি,২০১৮/ ই জাহান