ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামখ্যাত সাবেক শিক্ষক অজয় রায় দীর্ঘ কর্মজীবনে গবেষণাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আবার অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। সোমবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ফুসফুসের সংক্রমণের পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছেলে লেখক ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার পর থেকেই দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই তার জীবনের শেষ সময়গুলো অতিবাহিত হয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অজয় রায়ের ছাত্র ও দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী মুহাম্মদ ইব্রাহীম।
১৯৩৫ সালের পহেলা মার্চ দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অজয় রায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সারাজীবন কাটিয়েছেন তিনি।
মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, 'একজন সুপরিচিত বিজ্ঞানী। এক কথায় একজন অমায়িক যুক্তিবাদী ও নিষ্ঠাবান পদার্থবিদ। দু'একজন অনুকরণীয় শিক্ষকের মধ্যে তিনি একজন যিনি মূলত ল্যাবরেটরিতেই পড়ে থাকতেন। এমনকি অবসরের পরেও ল্যাবরেটরিতে আসতেন তিনি'।
তবে একজন প্রাতিষ্ঠানিক পদার্থবিদ হিসেবেই নিজেকে আটকে রাখেননি অজয় রায়। একদিকে এশিয়াটিক সোসাইটির বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদক আবার অন্যদিকে ছিলেন ইতিহাস পরিষদের সহ-সভাপতি।
মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, লেখালেখির জগতে বেশ বড় কাজ আছ তারা। বাংলা একাডেমির বাঙালা ও বাঙালির ইতিহাস গ্রন্থের সম্পাদক ছিলেন তিনি।
"তার সাথে অনেক বড় কাজের সুযোগ পেয়েছি। পরিভাষা কোষ রচনা করেছি আমরা। কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো শুধু একটি শব্দ নিয়েও আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি"।
বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ কিংবা লেখকের বাইরেও সক্রিয় ছিলেন অজয় রায়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। জড়িত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের সাথেও।
"এর বাইরে আবার তিনি শিক্ষকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনীতি সচেতন মানুষ ছিলেন। শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাতায় পাকিস্তান আমল থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ এসেছিলো। এর অনেক বিষয়ের সাথে তিনি একমত ছিলেন না। কিন্তু এর মাধ্যমে শিক্ষকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষায় তার ভূমিকা ছিলো অসাধারণ," বলছেন ইব্রাহীম যিনি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন।
প্রয়াত পদার্থবিদ সুলতান আহমেদ ও অজয় রায় খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, "এ দুজনের কাছেই আমরা পদার্থবিদ্যার অ আ ক খ শেখার সুযোগ পেয়েছি বলে কৃতজ্ঞ। সুলতান আহমেদ আগেই চলে গেছেন। আজ চলে গেলেন অজয় রায় এবং এর মাধ্যমেই আমাদের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো"।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম