প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়া, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের প্রতিবাদে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। এতে সারা দেশের সকল জেলার স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজবাড়ীর স্বেচ্ছাসেবক আশিকুজ্জামান শুভ বলেন, দেশে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মহামারি আকার ধারণ করে তখনই স্বাস্থ্যখাতে জনবল সঙ্কটের কারণে হিমশিম খেতে হয়েছিল সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের। যে হারে করোনা রোগী বেড়েছে সে হারে নমুনা সংগ্রহের সুযোগ ও সুবিধা ছিলনা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের অপ্রতুলতার কারণে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত না থেকেও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এগিয়ে আসেন সারাদেশের স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। এ পর্যন্ত ৯৪টি পিসিআর ল্যাবে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ লাখ। তার মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা সারাদেশে প্রায় ১২ লক্ষ নমুনা সংগ্রহ করেছে। এখনো নমুনা সংগ্রহ ও পিসিআর ল্যাবে কাজ করে যাচ্ছে।
গাইবান্ধা থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবক আবির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহবানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা এগিয়ে না আসলে করোনা মহামারিতে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ হাজার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হতোনা। করোনা মহামারি রোধে নিয়োজিত সেই সকল ফ্রন্টলাইনার যোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এমআইএস শাখার পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান একটি বেসরকারি টেলিভিশনে গত ১৮ ডিসেম্বর বিরূপ মন্তব্য ও অসত্য বক্তব্য প্রদান করেছেন। এতে আমরা স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা মর্মাহত ও ক্ষুদ্ধ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নাসিম আহমেদ বলেন, গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়ার পর ১২ ডিসেম্বর ঢাকার মোট ৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পরীক্ষা। এতে প্রায় ২৩ হাজার ৫২২ জন অংশ নেন। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়নি। পরীক্ষায় অনেক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। অধিকাংশ পরীক্ষার্থী ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। কেউ মোবাইলে দেখে দেখে, কেউ ইন্টারনেট ব্রাউজ করে, কেউ কপি করে খাতায় লিখেছে। আবার অনেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার অনিয়মের অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন এখনো আমলে নেয়নি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের স্বেচ্ছাসেবক নিত্য মন্ডল বলেন, দেশে একমাত্র সর্বোচ্চ করোনা পরীক্ষা করা হয় রেফারেল সেন্টারে। বিদেশগামী যাত্রীর করোনা পরীক্ষা এই রেফারেল সেন্টারেই হয়। গড়ে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কারণে।
নিয়োগ পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকদেরকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে, এই স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের উপর দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান দেশের করোনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ (বিএমটিপি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম থেকে বলেছে এবারের নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র বাহিরে চলে এসেছে, বহিরাগত অনেককেই হলের ভিতরে কপি সরবরাহ করেছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ কমিটি সুষ্ঠু পরীক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাজেট অধিবেশনে সকল স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পর্যায়ক্রমে নিয়োগের আওতায় আনা হবে বলার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়ার পরও এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের। অথচ ১ম দফায় ১৪৫ জন ও ২য় দফায় ৫৭ জনসহ মোট ২০২ জন স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণকে রাজস্বখাতে নিয়োগ প্রদান করা হয়। আবার সেই করোনা যোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কেন বাস্তবায়ন হয় নাই, প্রশাসনের উদাসীনতার প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই সাথে ২য় ঢেউয়ে যাতে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করতে না পারে তাই সারাদেশে বাদ পড়া সকল স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্টদেরকে রাজস্বখাতে দ্রুত নিয়োগের জোর দাবি জানান।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন