কিশোরগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার জাকির হোসেনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে র্যাব। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
পরে র্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ মডেল থানার কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে অচেতন অবস্থায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন সকালেই তিনি মারা যান।
কে এই নিহত রমিজ উদ্দিন
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাঞ্জাবির পকেটে থাকা কাগজপত্রের মাধ্যমে রমিজ উদ্দিনকে শনাক্ত করা হয়। তার বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়। এ ঘটনায় নিহত রমিজ উদ্দিনের ছেলে বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। নিহত রমিজ উদ্দিন ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি গরু কেনাবেচার ব্যবসা করেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য খামারের মাধ্যমে লালনপালন করে বৃহৎ আকারে গবাদিপশুর ব্যবসা করার পরিকল্পনা নেন।
যেভাবে খুনিকে গ্রেফতার
এ হত্যার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর অভিযানে গত রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার একটি মসজিদ থেকে মো. জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেন।
যে কারণে যেভাবে খুন
জাকির নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন। মূলত রমিজ উদ্দিনের অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই তাকে খুন করেন জাকির। জাকির র্যাবকে জানান, নিহত রমিজ উদ্দিনকে তিনি বলেন, তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সামীন্তবর্তী গ্রামে, সেখানে কম মূল্যে গরু পাওয়া যায়। তার প্রতি আস্থা স্থাপন করেন রমিজ। হত্যার ১০ থেকে ১২ দিন আগে তিনি রমিজ উদ্দিনকে গরু কেনাবেচার স্থানেও নিয়ে যান। রমিজ ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা তোলেন। জাকির এরপর রমিজকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং পরবর্তী সময়ে বড়পুল এলাকায় যান। এখান থেকে রিকশায় ঘটনাস্থল সদর থানাধীন কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় যান এবং নির্জন এলাকায় অবস্থান নেন। জাকির তখন রমিজকে বলেন, গাড়িতে করে গরু এখানে আসবে আর সে জন্য সেখানে দীর্ঘক্ষণ থাকতে হবে। রাত দেড়টার দিকে রমিজ উদ্দিনকে কৌশলে ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নিয়ে যান জাকির। তারপর রমিজ উদ্দিনের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে জোরে আঘাত করেন। হাতুড়ির আঘাতে রমিজ উদ্দিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপালে, মুখে, বাঁ চোখের ওপর ও নিচে এবং মাথার বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি রমিজ উদ্দিনকে মৃত মনে করে ওই স্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যান।
হত্যার পর নামাজ ও মক্তবে ছাত্র পড়ান জাকির
জাকির র্যাবকে জানান, রমিজকে হত্যার পর তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে আসেন এবং নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেন ও নামাজে অংশগ্রহণ করেন এবং মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে পড়ান। জাকির মনে করেছিলেন, রমিজ উদ্দিনকে হত্যার কথা কেউ জানতে পারবে না। তাই তিনি তার সাধারণ রুটিন অনুযায়ী চলাচল করতে থাকেন।
আত্মগোপনে নিজেকে নিরাপদ না ভেবে তাবলীগের চিল্লায় যান খুনি
র্যাবের বিজ্ঞপ্তিটি বলা হয়েছে, ‘পরে হত্যার ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে জাকির হোসেন ভয় পেয়ে যান। তিনি মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। নরসিংদীর মাধবদী, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ে, ময়মনসিংহ সদরে, সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ এবং সিলেট থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ এসে আত্মগোপনে থাকেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন এবং সেখান থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে চিল্লায় যান।’
অর্থাৎ আত্মগোপনে নিজেকে নিরাপদ না ভেবে তিনি চিল্লায় যান।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ