দুবাইয়ে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও তার ভাই শামিম এবং কাশিমপুর কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী মামুনের ক্যাডাররা ঢাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করছেন। টাকার প্রয়োজন হলেই তারা ব্যবসায়ীদের টার্গেট করেন। এক লাখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকিসহ প্রকাশ্যে গুলি করতেন জিসানের ক্যাডাররা।
সর্বশেষ রাজধানীর বাড্ডায় চাঁদা দাবি করে এক ব্যবসায়ীকে গুলির ঘটনায় জিসানের সাত ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গ্রেফতাররা হলেন মো. নাসির, কাওছার আহমেদ ইমন, মোহাম্মদ জীবন হোসেন, মো.ওমর খৈয়াম নিরু, ফারহান মাসুদ সোহান, মো. আসলাম ও মো. মহিন উদ্দিন জালাল।
আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা দুবাইপ্রবাসী চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ক্যাডার বলে স্বীকার করেছে। তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণে জিসানের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, গত ১৯ নভেম্বর পূর্ববাড্ডা আলিফনগর এলাকার জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খান ওরফে টুটুলকে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা সঠিক সময়ে না দিলে সন্তানসহ পরিবারের ওপরে হামলা করা হবে বলে হুমকি দেন।
পরে গত ২১ নভেম্বর বিকালে জেনারেটর ব্যবসায়ী টুটুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন ব্যক্তি প্রবেশ করে চাঁদার টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা গুলি করে চলে যান। সন্ত্রাসীরা আবারও ফোন করে চাঁদার পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।
পরে এ ঘটনায় টুটুল বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি ছায়া তদন্তের ধারাবাহিকতায় ডিবি গুলশান বিভাগ সাতজনকে গ্রেফতার করে।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মামলাটি তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে সন্ত্রাসী মো. নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৬ ডিসেম্বর বাড্ডা ও বান্দরবান থেকে বাকি ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তাদের কাছ থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩ রাউন্ড গুলি এবং ছয় হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, দুবাইয়ে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও তার ভাই শামিম এবং কাশিমপুর কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী মামুনের ক্যাডার ইমন, জীবন এবং নিরুর টাকার প্রয়োজন হলে তারা এলাকার বড় ভাই মো. মহিনউদ্দিন জালালের কাছে যান। তাদের একটি ‘কাজ’ অর্থাৎ ‘টার্গেট’ দেওয়ার জন্য বলেন।
পরবর্তীতে মো. মহিনউদ্দিন জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খান ওরফে টুটুলের খোঁজ দেন। নীরু, জীবন, ইমন কাজটি করার জন্য বাসের হেলপার নাসিরকে ঠিক করেন। কীভাবে গুলি করতে হবে তা নাসিরকে ক্যাডার জীবন শিখিয়ে দেন।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা টুটুলের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কয়েকবার টুটুলকে প্রাণনাশের হুমকি দেন তারা। পরে টুটুল টাকা না দিলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গুলি ছুড়ে চলে যান।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ