সন্ত্রাস এমন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, বাংলার ঈশান কোণই নয়, সমস্ত আকাশটা জুড়েই ঘনঘোর কালো মেঘে আচ্ছন্ন। অন্যদিকে যে কোনো মুহূর্তে সামাজিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দুই জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের কারও আচরণেই তাদের কোনোরকম শঙ্কিত, আতঙ্কিত বা উৎকণ্ঠিত বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এটা গোটা দেশের জনগোষ্ঠী দগ্ধীভূত হৃদয়ে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে। কেউ কেউ এতটাই আতঙ্কিত যে প্রশ্ন করেন, আমরা কি সত্যিই সোমালিয়া হয়ে যাব? অর্থনীতি শুধু ভঙ্গুর নয়, অবকাঠামো এমনভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে যে, ২০১৯ নয়, একে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় পার হয়ে যাবে। বেদনাদায়ক হলেও লক্ষণীয়, জনগণ রাজনৈতিক অবক্ষয়ের দীপ্তিহীন আগুনের নির্দয় দহনে দগ্ধীভূত হলেও আজ নির্বিকার। এর সমাধানে যেভাবে বিস্ফোরিত হওয়ার কথা ছিল তা তো হচ্ছেই না, বরং সবকিছুকেই গতানুগতিক বা গা-সওয়া মনে হচ্ছে।
চাটুকার, মোসাহেব, স্তাবক, স্তুতিবন্দনায় পারদর্শীরা ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্বকে বোঝাচ্ছেন, ২০-দলীয় জোটের কোনো সমর্থন নেই- এটি তার প্রমাণ। অন্যদিকে ২০-দলীয় জোটের ওই একই শ্রেণির লোকেরা তাদের একচ্ছত্র নেত্রীকে বোঝাচ্ছেন, হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে আপনি অবিচল থাকুন, হঠাৎ করে বাংলাদেশ বিস্ফোরিত হবে।
গোটা জাতীয় রাজনীতিটিই আজকে 'ভিলেজ পলিটিক্স' স্টাইলে চলছে। এমন একটি তুচ্ছ ঘটনা এই অচল অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে, কোনো গণতান্ত্রিক দেশ এটি কল্পনার আঙ্গিকেও আনতে পারবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিকটতম প্রতিবেশী ভারত ছাড়া পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ প্রতিনিধিত্বপূর্ণ বলে মনে করে না। তবুও নিষ্ঠুর বাস্তবতা এই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একক প্রতিবাদ বিমুক্তকরণ চলছে অবারিত ধারায়। কী প্রশাসন, কী সংসদ, কী সংগঠন- সংসদ, শাসনতন্ত্র এবং সর্বশেষ অভিশংসন আইনের কারণে বিচারব্যবস্থাও আজ তার অাঁচলে বাঁধা। তিনি নিজে একটু কৌশলী হলে, আচরণে বিনম্রতা দেখালে উদ্ভূত পরিস্থিতিটি সৃষ্টি তো হতোই না, বরং আদর্শ-বিবর্জিত, কেবল সুবিধাবাদী পরিবেষ্টিত, ক্ষমতালোভী সুবিধাবাদী এবং শিকড়বিহীন প্রায় নিষ্প্রভ বিএনপির দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে তিনি পরিস্থিতিটি এড়িয়ে যেতে পারতেন। ৫ জানুয়ারি বিএনপি জনসভা করার যে অনুমতি চেয়েছিল সেখানে বিএনপি ৫ তারিখে, আওয়ামী লীগ ৬ অথবা একটু উল্টিয়ে আওয়ামী লীগ ৫, বিএনপি ৬- এভাবে একটি মধ্যস্থতা করা দুঃসাধ্য কিছু ছিল না। যদিও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (৪ জানুয়ারি) উপলক্ষে ৩ জানুয়ারি ছাত্রলীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করেছিল। ওইদিন (৫ জানুয়ারি) প্রশাসন থেকে রাজপথে মিছিল বা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও আওয়ামী লীগ নগরীর ২০০টি স্থানে সাংগঠনিকভাবে অবস্থান নিয়েছিল। আমার জানামতে ক্ষমতাসীন নেতৃত্বকে পারিষদবর্গ নিশ্চিত ধারণা প্রদান করেছে যে, ওরা সভা করার অনুমতি পেলে মিসরের ব্রাদারহুড অথবা থাইল্যান্ডের লাল শার্টের মতো অবস্থান নিয়ে নেবে। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলতে চাই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কেন বিবেচনার মধ্যে আনলেন তা আমার বোধগম্য নয়। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আহুত (যদিও তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল) মার্চ ফর ডেমোক্রেসির নিদারুণ ব্যর্থতা সাংগঠনিকভাবে বিএনপির দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে স্তাবকদের আশঙ্কা কতটা অসাড় ও অবাস্তব।
এনটিভির বার্তা সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সম্প্রতি একটি সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। কথায় কথায় তিনি জানালেন- তার স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাটি তাকে জিজ্ঞেস করছে- বাবা, আমি স্কুলে যাচ্ছি না কেন? চ্যানেল আই'র তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক সাংবাদিক জিল্লুর রহমানও একই কথা আমাকে বলেছেন। আজকেও বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে জনস্বার্থের পরিপূরক কোনো কথা নেই। অর্থনীতি ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত নেই। পেট্রোলবোমা, ককটেল, গ্রেনেড হামলায় দগ্ধীভূত মানুষের আর্তনাদ তাদের কর্ণকূহরে পেঁৗছায় না। বরং তারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন অলৌকিকভাবে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন। আদৌ ভাবছেন না যে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হলেও তারা ক্ষমতায় থাকবেন কীভাবে! আওয়ামী লীগ আজ তাদের সংসদীয় ধারা থেকে অনেক দূরে সরে আছে। মস্কো, পিকিং, গণবাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত আওয়ামী লীগের নিজস্ব পরিচয়টিই আজ অবলুপ্ত? শহীদ সোহরাওয়ার্দী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর সযত্ন লালিত্যে তিল তিল করে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ আজ আর নেই। তবু তাদের সাংগঠনিক ভিত্তির কাছে বিএনপি ঝড়ের মুখে ঝরা পাতার মতো তাৎক্ষণিক উড়ে যাবে, এটা কি তারা একবারও ভাবেন না।
আমি বিভিন্ন নিবন্ধ ও টকশোতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছিলাম- এই মুহূর্তে সরকার হটানোর ক্ষমতা আপনাদের নেই, কাজেই সেই চেষ্টা ব্যর্থ হবে। মানুষ সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ ও বিরূপ হলেও আপনাদের সপক্ষে পথে নামতে নারাজ। নূর হোসেন ও ডা. মিলনের মতো আর কেউ এখন আত্দাহুতি দেওয়ার মানসিকতা রাখে না। বরং স্বেচ্ছা কারাবরণ, দেশজুড়ে আপনারা বেগম খালেদা জিয়াসহ গণঅনশনের মতো সত্যাগ্রহ কর্মসূচি গ্রহণ করে একেকটি আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মধ্য দিয়ে দলকে এবং জনগণকে উজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করুন। ইতিহাস থেকে মুখ ফিরিয়ে না রেখে '৬০ থেকে '৭১-এর আন্দোলনের সোপান উত্তরণের প্রেক্ষাপট অনুধাবন করে নিছক জনগণের স্বার্থ-সংবলিত কর্মসূচি গ্রহণ করুন। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস শুধু জীবনহানিই ঘটাবে। কেয়ামত পর্যন্ত এ পথে ক্ষমতার মুখ দেখবেন না।
বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো কথাই নেই। উভয় জোটেরই কর্মসূচির শেষ কথা- ক্ষমতা। একদল ক্ষমতায় থাকবেনই, আরেকদল ক্ষমতায় আসবেনই। দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে সেটি তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। ৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি আমি গভীর মনোযোগের সঙ্গে শ্রবণ করেছি। সেখানে তার এক বছরের অর্জন-সফলতার চিত্র আর খালেদা জিয়ার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু দেশে বিদ্যমান সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। বিএনপিও দুর্নীতির বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করে না। এই সমীকরণের অর্থ জনগণ বুঝতে অক্ষম মনে হলেও বাস্তবে বিষয়টি ভিন্ন।
চ্যানেল আইয়ের জনাব জিল্লুর ও এনটিভির শাহাবুদ্দিন সাহেবের সন্তানই নয়, সব কোমলমতি শিশু, যারা রাজনীতির স্বার্থান্ধ খেলার সঙ্গে পরিচিত নয়, তাদের সবারই জিজ্ঞাসা- তারা স্কুলে যেতে পারছে না কেন? দেশ মোটামুটি দুটি জোটে বিভক্ত। রাজনৈতিক নৈতিকতায় সব দলেরই নিজস্ব আদর্শ থাকা উচিত। বাস্তবে না হলেও গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে অবশ্যই এ বিধান রয়েছে। অথচ শুধু ক্ষমতা দখলের ক্ষীণ বাসনা ও হীনমন্যতা থেকে সব আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে তারা দুটি জোটের সঙ্গে শুধু সম্পৃক্তই হয়নি, স্তাবক, পারিষদবর্গ ও মোসাহেবের মতো দুই নেত্রীর ইঙ্গিতে, ইশারায় নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে পরিচালিত হচ্ছেন। তাতে অদূরভবিষ্যতে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি যে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তা কি তারা আদৌ অনুধাবন করছেন? পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে প্রত্যেকটি দল তার আপন আঙ্গিক এবং আদর্শে উজ্জীবিত। ভারতে জোট যে হয় না তা নয় কিন্তু সব সংগঠনেই গণতন্ত্রের অনুশীলন বিদ্যমান যে, প্রতিটি সংগঠনের একজন কর্মী থেকে শীর্ষ নেতা পর্যন্ত তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি সম্পর্কে সচেতন ও অবহিত। তাই রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে সংগঠন থেকে প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। সেজন্য সেখানে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা ও সক্রিয়তায় জনগণের হৃদয়ে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত। কিন্তু অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য যতই থাক, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে তারা অভিন্ন ও একাত্দা। ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তন হলেও বিদেশ সচিব সুজাতা সিংসহ কোনো অভিজ্ঞ সচিবকেই সরানো হয়নি।
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এসেছেন। গত রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সৌজন্যে দিলি্লর রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি ভোজসভার আয়োজন করা হয়, সে অনুষ্ঠানে সোনিয়া গান্ধী, ড. মনমোহন সিংসহ সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষ রাজনীতিক, চলচ্চিত্র, শিল্প-সাহিত্য, সংগীত ও ক্রীড়াঙ্গনের সব তারকা উপস্থিত ছিলেন। ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজ হাতে কোমল পানীয়ের গ্লাস তুলে দেন বিরোধী দল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর হাতে। এ সময় তারা পরস্পর খোশগল্পে মেতে ওঠেন এবং তাদের দুজনকেই হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। এমন রাজনৈতিক সহিষ্ণুতায় বিমোহিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি ভারতীয়দের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন- 'আমরা আপনাদের বন্ধুত্ব ও দোস্তিকে অনুভব করি এবং আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি।' এর মধ্য দিয়ে ভারতীয়দের জাতীয় ঐক্য ও অভিন্নতার দিকটি উজ্জ্বলভাবে প্রতিভাত হয়। একটি সভ্য জাতি হিসেবে তাদের অগ্রযাত্রার এটি এক উজ্জ্বলতম ও গৌরবদীপ্ত দিক। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে শুধু ৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিই নয়, পারমাণবিক শক্তিকে কল্যাণমুখী ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের প্রশ্নে যে কয়টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলো মূলত ভারতের সপক্ষে। সন্দেহাতীতভাবে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের মৃদু টানাপড়েন বিশ্বরাজনীতিতে অনুভূত হচ্ছিল। ওবামার সফর ভারতীয় রাজনীতিকদের সাবলীলতা ও সহিষ্ণুতা শুধু বারাক ওবামাকেই বিমোহিত করেনি- চীন, পাকিস্তানসহ সমগ্র বিশ্বকে একটি নতুন বার্তা দিল এবং বিশ্বশান্তির পক্ষেও একটি রাখিবন্ধন রচনা করল। ওবামা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে সমর্থনেরও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এখান থেকে আমরা কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করব না, বরং দুটি জোটই নিজ নিজ আঙ্গিক হতে এই দুটি দেশের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ অথবা কৃপাভিক্ষার দৈন্যতা দেখাব। 'সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়' সংবিধানের এ কথাটি আজ মিছে। ক্ষমতাসীন জোটের অপ্রতিরোধ্য নেতা প্রতি পদে পদে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিদ্রূপ করে ও কটাক্ষ হেনে আত্দতৃপ্তি লাভ করেন। দাম্ভিক উন্নাসিকতার পরিণতি বোধ হয় তিনি উপলব্ধি করেন না। মোদি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় তো বসেই গেছেন। প্রবীণ নেতা আদভানিকে প্রণাম করলে, মনমোহন, সোনিয়াকে যথাবিহিত সম্মান দিলে, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বারাক ওবামাকে সম্মান দিলে দেশের জন্য কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনা যায় মোদি সেটা অনুধাবন করেন। কিন্তু হায়! দুর্ভাগ্য আমাদের।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এবার আরও একটি তুচ্ছ ঘটনা দেশের রাজনীতিতে 'ভিলেজ পলিটিক্সের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে। সেটি হলো- কোকোর মৃত্যুর সমবেদনা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গেট থেকে ফিরে আসার বিষয়টি। সংসদে, রাজনৈতিক অঙ্গনে, টকশোতে এটিই এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়। সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক বিশ্লেষণে কে হারলেন, কে জিতলেন এ প্রশ্নটি মুখ্য নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত রাজনৈতিক সহনশীলতার প্রশ্নে তো বটেই, বিএনপির এই আচরণটি সামাজিক শিষ্টাচারেও বিবর্জিত। সংসদের আলোচনায় এটি এত বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে যে, মনে হচ্ছে জাতি সমস্যা বিমুক্ত- আকাশ পরিচ্ছন্ন। অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বিকলাঙ্গ হচ্ছে না! আরেকটি প্রশ্ন আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে- খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি বানিয়ে অবিলম্বে গ্রেফতার করা। হরতাল-অবরোধের আড়ালে আজকে যে মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে তার থেকে যে কোনো মূল্যে জাতি মুক্তি চায়। এই আতঙ্ক, এই চোরাগোপ্তা হামলা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা হতে মুক্তির জন্য খালেদা জিয়ার গ্রেফতারই শেষ সমাধান হলে কালক্ষেপণ করা উচিত নয় বলে সরকারি দলের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি। আমার প্রশ্ন- বুমেরাং হলে?
এর অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান না হলে সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে বলে ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞরা মত প্রদান করলেও নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো- এই সন্ধিক্ষণে কোনো তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি অনুপস্থিত। বিশেষভাবে এ অবস্থাটি 'দুই নেত্রী'র কুশলী পরিকল্পনারই ফলশ্রুতি। 'দুই নেত্রী' যে ধনুকভাঙা পণ করে পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে অটল রয়েছেন সেখান থেকে তাদের সরাতে হলে সামাজিকভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই ঘনঘোর অমানিশার মধ্যে আমার নিশ্চিত ধারণা ১৬ কোটি মানুষের বুকফাটা ফরিয়াদ আল্লাহ ফিরিয়ে দিতে পারেন না। এই ক্ষমতালিপ্সু, দাম্ভিক, জনস্বার্থ-বিবর্জিত রাজনীতির বৃত্ত থেকে মহান আল্লাহ আমাদের অবশ্যই নিষ্কৃতি দেবেন।
লেখক : রাজনীতিক