রাজনীতির নামে ‘সন্ত্রাস করা’ যেমন অন্যায় তেমনি বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ‘যে কোনো মূল্যে দমন’ করার ঘোষণাও অন্যায্য। রাজনৈতিক ‘সহিংসতা’ আর বিশেষ বাহিনীর ‘ক্রসফায়ার’- কোনোটাই গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না। গেল এক মাসের অবরোধ-হরতালে নিহত হয়েছেন ৪৬ জন, অন্যদিকে এই সময়ে তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’-এ নিহত হয়েছেন ৮ জন; যানবাহন অগ্নিদগ্ধ-ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯০০টি, বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন ১০৫ জন মানুষ, রেলে নাশকতা হয়েছে ১০টির মতো। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে লক্ষ্যযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেই; তাই বলা যায়, উপরোল্লিখিত পরিসংখ্যানগুলো ক্রমাগত এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুই দল যেভাবে ‘মারমুখী’ আর ‘মুখোমুখি’ তাতে চলতি সমস্যার ফয়সালা আলোচনার ‘টেবিলে’ নয় বরং ‘রক্তাক্ত রাজপথে’ই ঠিক হবে।
দেশে এখন যুদ্ধাবস্থার মতো চলছে; শিক্ষা, উৎপাদন, ব্যবসা- সবই এই ‘নষ্ট রাজনীতি’ আর ‘দুষ্ট ক্ষমতালোভী’দের খপ্পরে পড়ে গেছে। রাজনীতি আর রাষ্ট্র থেকে মানুষ আর মানবিকতা যেন কর্পুরের মতো উবে গেছে। ব্যর্থ রাজনীতির জঘন্য প্রতিফলনই চারদিকে দেখতে পাচ্ছি। রাজনীতিতে ‘সুবচন’ আর ‘সুনীতি’ এখন নির্বাসিত। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির পাকচক্রে ‘সুন্দর’ ও ‘সৃষ্টিশীলতা’ বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। চলছে রাজনীতির কূটচাল, কূটকৌশল আর লাগামহীন উসকানিমূলক বাতচিতে ভরে গেছে রাজনীতির বাওবাতাস। সমগ্র দেশ আজ বিভক্ত এবং বিভক্ত দেশের মানুষও। হিংসা আর প্রতিহিংসায় উন্মুত্ত ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতামুখী রাজনীতি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের এবং সবাই সবার শত্রু, সম্ভাব্য শত্রু; কী ভয়ঙ্কর! চারদিকে কেবল সন্দেহ, অবিশ্বাস আর শঙ্কা; কেমন এক দ্বিধান্বিত গুমোট অবস্থা। মানুষ কেন রাষ্ট্র বানায়? উত্তরে আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন, মানুষ রাষ্ট্র বানায় মূলত তিনটি কারণে- এক. রাজনৈতিক/ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্যে, দুই. জীবন/বেঁচে থাকার নিরাপত্তা পাবে এই প্রত্যাশায়, তিন. জীবিকা/অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় সে লক্ষ্য কতটা অর্জিত হচ্ছে? নাকি আমরা আবার রাষ্ট্রপূর্ব অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি? রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘নাগিনীরা দিকে দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস/শান্তির ললিত বাণী শুনাইবে ব্যর্থ পরিহাস।’
রোবায়েত ফেরদৌস : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;