বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আমার দেখার সুযোগ হয়েছে সর্বমোট তিনভাবে। কখনো বহু দূর থেকে, আবার কখনো অতি কাছ থেকে। ছাত্রলীগের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে তাকে দেখেছি রাজপথে। কর্মজীবনে সাংবাদিক হিসেবে আবার সুযোগ হয়েছিল ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার। সব শেষে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রিয় সহকর্মীকে দেখেছি একান্ত কাছ থেকে। আমার সব মানবসত্তার বোধ এবং বুদ্ধি দিয়ে তার হাঁটাচলা, কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি, শিষ্টাচার, মেধা ও মননশীলতা এবং রাশিযোগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করেছি। প্রথমে বলে নিই তার রাশিফল সম্পর্কে। তিনি তুলা রাশির জাতিকা। ইউরোপ এবং ভারতীয় জ্যোতিষীরা তুলা রাশির জাতক-জাতিকা সম্পর্কে প্রায় সমধারণা পোষণ করেন সেই অনাদিকাল থেকেই। অন্যদিকে আরব ও মিসরীয় জ্যোতিষীরা অবশ্য বলেন ভিন্ন কথা। তুলা রাশি সম্পর্কে জ্যোতিষ শাস্ত্রের তিনটি পৃথক মতের ওপর ভিত্তি করে যদি কেউ শেখ হাসিনার কুষ্ঠি নিরূপণ করেন তবে মানুষ হিসেবে তার ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা পোষণ না করে পারা যাবে না। তিনি বন্ধুবৎসল। পরোপকারী। একই সঙ্গে কোমল এবং শক্ত হৃদয়ের মানবী। তার রয়েছে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং আরও দ্রুততরভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর অসাধারণ প্রাকৃতিক ক্ষমতা। তিনি ভোজনবিলাসী, নিজে খান- অন্যকে খাওয়ান। রন্ধনকার্য এবং খাবার পরিবেশনার মধ্যে তিনি নিজের সৃষ্টিশীলতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি সৃষ্টির আনন্দে নিশ্চুপ থাকা একদম পছন্দ করেন না। বরং বিদ্রোহী কবির কবিতার মতো তিনি সৃষ্টি সুখের উল্লাসে নৃত্য করাকে সমর্থন করেন। আবেগ তাকে সর্বদা তাড়া করে। সুখানুভূতির মতো দুঃখের অনুভূতিগুলোও তাকে ভীষণভাবে উত্তেজিত করে। তিনি কাঁদেন- কেঁদে কেঁদে মনের কষ্ট লাঘব করে তিনি প্রশান্তির কোলে ঢলে পড়তে চান। প্রকৃতির অপরূপ রূপলাবণ্য এবং সুর-ছন্দ-লয় তাকে চৌম্বুকের মতো আকর্ষণ করে। তিনি হারিয়ে যেতে চান প্রকৃতির মাজারে, আবার ফিরে আসতে চান প্রকৃতির সুর-ছন্দ ও লয়ে অবগাহন করে।
তুলা রাশির জাতক-জাতিকার উলি্লখিত সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ শেখ হাসিনার রয়েছে। তার একান্ত আপনজনরা যেমন ওসব কথা স্বীকার করবেন- তেমনি বিরোধী পক্ষও অস্বীকার করতে পারবেন না। শত্রুরা হয়তো নানা মন্দ কথা বলতে চাইবেন। আমি না হয় আজ শত্রুদের কথা না শুনে তার শুভ্যার্থীদের কথাই শুনব। কারণ দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে যার হাতে শাসন ক্ষমতা তার সম্পর্কে বিশেষত তার ইতিবাচক দিক সম্পর্কে আমরা যদি না জানি তবে আমাদের দুঃখ, কষ্ট, আবেগ এবং হতাশার পাল্লা কেবল ভারী হতে থাকবে। তাই শেখ হাসিনা সম্পর্কে হতাশ না হয়ে বরং আশাবাদী হওয়ার কিছু উপকরণ যদি তুলে ধরা যায় তাহলে মধ্যপন্থি, উদারনৈতিক সাধারণ মানুষগুলো কিছুটা হলেও ভরসা খুঁজে পাবেন।
যা বলছিলাম, শেখ হাসিনার রাশিফলের ইতিবাচক দিকসমূহের বাইরে তার হস্তরেখা, শারীরিক গঠন, পদ-পদবি এবং সময়কালও কিন্তু জ্যোতিষ শাস্ত্র বিবেচনা করে থাকে। অপরাধ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন প্রণালি, কণ্ঠস্বর এবং কোষসমূহের গঠনের মধ্যে সফলতা, ব্যর্থতা, কর্মক্ষমতা, দীর্ঘায়ু, রোগবালাই এবং জনপ্রিয়তার বীজ লুকায়িত থাকে বলে বিজ্ঞানীরা হাজার বছর ধরে বলে আসছেন যা কিনা সময়ের পথপরিক্রমায় প্রমাণিত। শেখ হাসিনার মধ্যেও প্রকৃতি প্রদত্ত কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা থেকে তার সম্পর্কে যে কেউ আগাম ধারণা লাভ করতে পারেন। আমি তার শারীরিক গঠনের কয়েকটি সাদামাটা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাব।
জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা। কবি তার স্বপ্নের নায়িকা বনলতা সেনের রূপ মাধুর্য এবং চরিত্রের অনুপম প্রেমময় নির্ঝরতা বর্ণনা করতে গিয়ে চুলকে বেছে নিয়েছিলেন। এটি কেবল কবির কল্পনা নয়, বিজ্ঞান বলছে, মানুষের চুলের রং, গঠন এবং গন্ধের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। মনোকেষী নারী সব সময় আমুদে প্রকৃতির হয়। চুল যদি লম্বা হয় তবে নারীর মধ্যে শিশুর মতো সরলতা দেখা দেয়। মাঝারি লম্বা চুল হলে নারী হয় অতীব পরিশ্রমী, দৃঢ়চেতা এবং জেদি, চুলগুলো যদি ভীষণ চিকন হয় তবে নারীর থাকে বহুমুখী ছলাকলা এবং কূটকৌশল গ্রহণের প্রবণতা। অপেক্ষাকৃত মোটা চুলের নারীরা আতাসাতা প্যাঁচগোছ বোঝে না। সরল সোজা বা সোজাসাপ্টা পথ অনুসরণ করতে চায়। যা মুখে আসে তাই বলে দেয়- অন্তর আর মুখের ব্যবধান বেশি একটা থাকে না। নারীর মাথার গঠন যদি ছোট হয় তবে মন হয় সংকীর্ণ, বুনলতা ছোট চিন্তা বা ছোটলোকী আচরণ, এসব নারীকে রাহুর মতো গ্রাস করে ফেলে। অন্যেিদক যাদের মাথা তুলনামূলকভাবে আকৃতিতে বড় তারা অনেক উদার মনমানসিকতার হয়ে থাকে এবং চিন্তা-চেতনায় ভীষণ রকম উচ্চাভিলাষী হয়।
নারীর ললাট, চোখ, নাক ও ঠোঁটের গঠন প্রণালির ওপর তার চরিত্রের অনেক বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে। উন্নত এবং প্রশস্ত ললাটের নারীরা হয় চিন্তাশীল। তারা একান্ত নিজেকে নিয়ে ভাবে, পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং তার অধিক্ষেত্র নিয়ে সময় পেলেই সে চিন্তা করে। চোখ যদি কোটরাগত না হয় এবং আকৃতি যদি মধ্যম হয় সে ক্ষেত্রে নারীর চোখ এবং অন্তর প্রায়ই একত্রে কাজ করে। অর্থাৎ যা দেখে তাই হৃদয় মাঝারে বা মানসপটে এঁকে নেয়। এ ধরনের চোখের নারীরা প্রেম পরিণয় বা সাজুগুজুকে জীবনের প্রধান অবলম্বন মনে করে না- আবার অনর্থকও বিবেচনা করে না। জীবনের সবকিছুতেই তারা বিচিত্রতা খুঁজে বেড়ায়। আপনি যদি টিয়ার মতো খানিকটা বাঁকানো নাকের অধিকারী কোনো নারী বা পুরুষকে দেখতে পান তবে নিশ্চিতভাবে ধরে নিতে পারেন আপনার দেখা নারী বা পুরুষটি প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন লোক। তিনি নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্য পারেন না এমন কোনো কর্ম নেই। দরকার পড়লে হিমালয়ে চড়বেন কিংবা আটলান্টিকে ডুব মারবেন। নিজের আত্মমর্যাদাবোধের জন্য তার নানামুখী কর্মকাণ্ড ক্ষেত্রবিশেষে আপনার কাছে বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বিষয়টিকে ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অভ্যাস বলে ধরে নেন এবং সেভাবে তার সঙ্গে ব্যবহার করেন তবে অনেক ভুল বোঝাবুঝি এবং সংঘাত-সংঘর্ষের অবসান হয়ে থাকে।
নাকের মতো ঠোঁটের গঠনেও নারী-পুরুষের একই বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। অর্থাৎ চিকন ঠোঁটের অধিকারী নারী-পুরুষ একই চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকে। তারা কখনো মিষ্টভাষী আবার কখনো কটূভাষী হয়। অন্যদের তুলনায় একটু বেশি কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ভালো কিছু দেখলে যেমন নির্দ্বিধায় প্রশংসা করে তেমনি মন্দ কিছু দেখলে মুখ বুজে থাকতে পারে না- ফলাফল সব বলে দেয়। তাদের শ্রবণশক্তি দুর্বল প্রকৃতির হয়। মনোযোগ দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কোনো কিছু শুনতে তারা ক্লান্তিবোধ করে এবং প্রায়ই শোনা বিষয় বেমালুম ভুলে যায়। আর তাদের কানের আকৃতি যদি একটু বড় হয় তাহলে তো কথাই নেই- অর্থাৎ শোনার প্রবণতা তখন আরও কম হয়।
শেখ হাসিনার হস্তরেখার বৈশিষ্ট্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলাপ করে তার বাস্তবজীবনের কয়েকটি উদাহরণ বলে আজকের লেখা শেষ করব। আমি সরাসরি তার হাত দেখিনি। অর্থাৎ একজন জ্যোতিষী যেভাবে কারও হাত খালি চোখে কিংবা ম্যাগনিফাই গ্লাস দিয়ে দেখেন তেমনই করে আমি দেখিনি। ফলে হাতের জটিল রেখাসমূহ, আঙ্গুলের গঠন বা নখসমূহ আমি দেখতে পারিনি। দূর থেকে কিংবা ছবিতে তার হাতের যেসব রেখা ফুটে ওঠে তাতে বোঝা যায় তিনি সৌভাগ্যবতী। প্রকৃতির অনুপম খেলায় তিনি বহু সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছেন। তার হৃদয় রেখাটি বড়ই চমৎকার। আপনজনকে গভীরভাবে দায়িত্ব নিয়ে ভালোবাসার ক্ষেত্রে তার হৃদয় রেখা তাকে সাহায্য করে, তার জীবন রেখাও বেশ গভীর। দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ সবল দেহ তিনি প্রকৃতিগতভাবেই পেয়েছেন।
জ্যোতিষ শাস্ত্রের উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং মানুষের শরীরের গঠন প্রণালির ওপর তার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে কতটা প্রযোজ্য তা কেবল তার আপনজনরা বলতে পারবেন। তবে দেশের আমজনতা তাকে ১৯৮১ সাল থেকে দেখে আসছেন একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে, যিনি তার সুদীর্ঘ জীবনে বহু বিপদ-আপদে পড়েছেন। কখনো উত্তীর্ণ হয়েছেন আবার কখনো পরাজিত হয়ে দুর্ভোগে পতিত হয়েছেন। সফলতার সময় আমরা শেখ হাসিনাকে যেমন দেখেছি তেমনই বিপর্যয়ের সময়ও দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে তিনি সর্বদাই তার চরিত্রের দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার যে, আমি কেবল তার চরিত্রের ইতিবাচক দিকসমূহের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছি। তার আরও অনেক ভালো ভালো বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী যেমন রয়েছে তেমনই পৃথিবীর অন্যসব মানুষের মতো রয়েছে ক্রোধ, প্রতিহিংসাসহ নানান সব দোষত্রুটি। ইতিপূর্বে আমি বিএনপি নেত্রীর মৌলিক কতগুলো ইতিবাচক দিক নিয়ে লিখেছিলাম, কাজেই শেখ হাসিনার ভালো দিক নিয়ে আলোচনাও আমার জন্য একান্ত ফরজ হয়েছিল বহুদিন থেকেই।
দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যে, শেখ হাসিনা হয়তো তার মাননীয় গুণাবলীর সর্বোত্তম ব্যবহার করে সামনের দিকে এগুবেন। যে যাই বলুক না কেন, কোকোর মৃত্যুর পর বেগম জিয়ার বাড়ির সামনে হুট করে উপস্থিত হওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না। আমি নিজে হলে কোনো দিন ওমনটি করতে পারতাম কিনা সন্দেহ। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা বলা যাবে হয়তো। কিন্তু সেদিন যারা শেখ হাসিনার মুখমণ্ডলটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা তার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের আগে তিনি যে হঠাৎ করে বেগম জিয়াকে ফোন করে বসলেন তাতেও তার আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। আমি জেলে বসে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কাছে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। মামুন আমাকে বলছিল, শেখ হাসিনার আতিথেয়তা সম্পর্কে, তারেকের বিয়ের দাওয়াত কিংবা অন্য কোনো উপলক্ষে তারেক ও মামুন যখন শেখ হাসিনার বাসায় উপস্থিত হন তখন তিনি দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সঙ্গে প্রাণবন্ত পরিবেশে এবং একান্তে আড্ডা দেন এবং নিজ হাতে খাদ্য পরিবেশন করেন। মামুন বর্তমানে কারান্তরীণ এবং শেখ হাসিনার প্রতি যারপরনাই বিরক্ত। তারপরও তিনি শেখ হাসিনার সেই দিনের আন্তরিকতার স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারেন না।
১৯৮৬ থেকে আজ অবদি অনেকগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তিনি প্রচণ্ড দৃঢ়তার সঙ্গে নিয়েছেন। প্রতিকূল পরিবেশ, সহকর্মীদের শত বাধা এবং গণমানুষের চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণরূপে তার বিপক্ষে থাকার পরও তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবং পরবর্তীতে আবার সংসদ থেকে বের হয়ে আসা চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না। ১৯৯১ সালের পর বিএনপিবিরোধী আন্দোলনে সফলতা, ১৯৯৬ সালের সরকারপ্রধান হিসেবে সফলতা- যেমন মামুলী ঘটনা নয় তেমনি ১/১১'র প্রেক্ষাপটে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনোমতেই সাধারণ বলা যাবে না। সব শেষে যে যাই বলুক না কেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি তিনি করেছিলেন একক সিদ্ধান্তে- তাবৎ দুনিয়ার মহাশক্তিধর রাষ্ট্রশক্তির হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে কেবলমাত্র নিজের দলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে।
আমি তাকে খুবই কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছি। প্রথমবার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন পরাজয়ের পর এবং দ্বিতীয়বার গাজীপুর সিটিতে পরাজয়ের পর। উভয়টিতে আওয়ামী লীগ বড়ই অসম্মানজনকভাবে পরাজিত হয় যদিও তারা জয়লাভের জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছিল। দলের সর্বশক্তি এবং প্রশাসনের সর্বশক্তি ব্যবহার করার পর যখন পরাজয়বরণ করতে হলো তখন দলের সর্বস্তরে হতাশা ছড়িয়ে পড়ল। ঠিক সেই সময়ে আমি শেখ হাসিনার দৃঢ়তা দেখেছি এবং তখনই অনুমান করেছিলাম আগামীতে কী হতে পারে।
দেশের অন্যসব নাগরিকের মতো শেখ হাসিনা অবশ্যই জানেন- সারা দেশে আসলে কী হচ্ছে। আমি নিশ্চিত- যখন তিনি দেখবেন পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে নেই তখন তিনি যে কোনো নাটকীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন। এখন যেমন সব কিছু তার একক সিদ্ধান্তে হচ্ছে তখনো তিনি এককভাবেই সিদ্ধান্ত নেবেন। দল বা নিজের সর্বনাশ বা অস্তিত্ব নিয়ে তিনি অনেকের চেয়ে বেশি ওয়াকিফহাল। একটি উদাহরণ দিয়ে আজকের লেখা শেষ করব। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কেমন নির্বাচন হয়েছে তা বোঝার জন্য নিচের উদাহরণটিই যথেষ্ট।
নির্বাচনের পর এফবিসিসিআইর নেতৃত্বে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা গেলেন গণভবনে। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হতেই হাসিমুখে বললেন- তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার জন্য আপনাকে স্বাগতম। প্রধানমন্ত্রী মুচকি হাসি দিয়ে বললেন- 'আনিস! আর ইউ সিওর'। ব্যবসায়ী নেতা কোনো উত্তর করতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পেছনে সরে এলেন। তার সহকর্মীরা তাকে মশকরা করে বলতে লাগলেন- মিয়া পারবেন না তো এগিয়ে গিয়ে কেন ফ্রাটারিং করতে গেলেন? আপনি কি শেখ হাসিনাকে শিশু মনে করেন? তিনি কি জানেন না- তিনি কতবারের এবং কততম প্রধানমন্ত্রী? তিনি কি এও জানেন না যে, কোন কাজে তিনি স্বাগতম শব্দটি উপহার পেতে পারেন কিংবা পারেন না?
লেখক : কলামিস্ট।