তিন সিটি নির্বাচন সীমাবদ্ধ ছিল রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মধ্যে। ছোট পরিসরের একটি নির্বাচন। অথচ এই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরাট সংকট সৃষ্টি করে দিয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। ভোট গ্রহণের আগে এই নির্বাচন নিয়ে যতটা ইতিবাচক আলোচনা ও লেখালেখি হয়েছে এখন হচ্ছে তার উল্টো। সতর্ক ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনের নেতিবাচক দিকসমূহ তুলে ধরলেও সরকারি লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা সব কিছু ইতিবাচকই দেখছেন। একে একটি আদর্শ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বলতে এসব 'দলদাস' একটুও সংকোচবোধ করছেন না। এরা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের 'প্রাপ্ত' ভোটের পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে তারা এত ভোট পেলেন কী করে? প্রসঙ্গক্রমে এই 'প্রাপ্ত ভোট' প্রশ্নে বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামানের একটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই। ২৩ এপ্রিল ভোট গণনা চলাকালে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, 'নির্বাচন কমিশন এখন ভোট গণনায় মনোযোগ না দিয়ে 'ভোট বিতরণে' ব্যস্ত আছে। এ থেকে পাঠক, এটা কী বলা যায় না যে, বিএনপি প্রার্থীদের যে ভোটকে 'প্রাপ্ত' বলা হচ্ছে, তাকে 'প্রাপ্ত' না বলে 'প্রদত্ত' বললেই সমীচীন হতো! সিটি ভোটে যে কারচুপি হয়েছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তা স্পষ্টই ধরা পড়েছে, লুকোছাপা করার কোনো সুযোগ নেই। সরকার সমর্থকরা বলার চেষ্টা করছেন যে, ঢাকায় প্রায় দুই হাজার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে হাতেগোনা কিছু কেন্দ্রে 'ছিটেফোঁটা' গোলমাল হয়েছে, খুন-খারাবির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাতেই নাকি বলা যায় নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে। তারা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোটের পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলছেন, কারচুপি হলে তারা এত ভোট পেল কী করে? আমার মনে হয়, এ ব্যাপারে পাঠকরা কমরেড খালেকুজ্জামানের বক্তব্য বিবেচনায় নিতে পারেন।
সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, সরকার সমর্থকরা যত কথাই বলুন না কেন, নির্বাচনটি মোটেই একটি আদর্শ নির্বাচন ছিল না। যাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে তারা সরকারি ক্ষমতার ছায়ায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় দায়িত্ব পালন করবেন ঠিক; কিন্তু গৌরবদীপ্ত বিজয়ের স্বাদ ভোগ করতে পারবেন না। এ নির্বাচন শুধু বিএনপি বা অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই যে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা নয়, দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী ও সিনিয়র সিটিজেন এবং বন্ধুপ্রতিম অনেক রাষ্ট্র ও সংস্থাও এ নির্বাচনকে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলছেন না। বরং এ নির্বাচনে সরকার পক্ষ ও নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকায় তারা এ দেশের পরবর্তী যে কোনো নির্বাচন, সর্বোপরি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, 'যা ঘটেছে, যা পড়েছি, দেখেছি, উপলব্ধি করেছি, তাতে এটা পরিষ্কার যে, নির্বাচন নিয়ে যা ঘটেছে তা মোটেও ভালো হয়নি। ...এখন নির্বাচনে কী হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলসহ সবাই দেখেছে। এর প্রভাব জাতীয় জীবনে, রাজনীতিতে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় পড়বে। এ থেকে পরিষ্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজনীতি ভঙ্গুর অবস্থানে চলে গেছে।' স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, 'কী হয়েছে তা তো সবার কাছেই পরিষ্কার। দেশে আর কী ব্যবস্থা আছে? সব ব্যবস্থাই তো বলা যায় শেষ হয়ে গেল। জাতীয় ও রাজনৈতিক জীবনে যে সংকট ছিল তা থেকেই গেল। ...নির্বাচন কমিশনের ওপর এখন আর মানুষের কোনো আস্থা নেই।' রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক বলেছেন, "আমরা একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছি। আমরা এক ধরনের 'ম্যানেজড' নির্বাচনের যুগে প্রবেশ করেছি। সেই ধরনের একটি নির্বাচনই হয়ে গেছে। এটা দেশের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো নয়।" স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, 'নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষ তাদের ক্ষোভ, অভিযোগ, অসন্তোষ প্রভৃতি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় প্রকাশ করার একটি সুযোগ পায়; কিন্তু সিটি নির্বাচনে মানুষ সেই সুযোগ পেল না।.নির্বাচন কমিশন নিয়েই একটা সমস্যা দাঁড়িয়েছে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের চরম আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।'
তিন সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন না হওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে বেশ উৎসাহ দেখিয়েছে বিদেশি অনেক বন্ধুরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। সবাই এ নির্বাচনটি যাতে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়েছে। আমাদের দেশবাসীর মতো তারাও আশা করেছিলেন যে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের সহিংসতা, নাশকতা, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটাবে এ নির্বাচন। এর মাধ্যমে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে একটা সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং এ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশ আবার গণতন্ত্রের মসৃণ সড়ক ধরে পথ চলবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভুল সংশোধিত হবে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে। অনেকে এমন ধারণাও পোষণ করেছেন যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে মহল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে একটা সমঝোতা প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্য উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তারাই পর্দার অন্তরালে থেকে উদ্যোগ নিয়ে দুই পক্ষকে কাছাকাছি এনেছিলেন এবং তারই কিছু শুভ আলামত জাতি প্রত্যক্ষ করেছে সিটি নির্বাচনের আগে। এখানে উল্লেখ করা খুবই জরুরি যে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবার যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন দুই পক্ষকে নমনীয় করার জন্য। তিন মাসের অবরোধ-হরতালে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তা সবারই জানা। ব্যবসায়ী মহলে বিএনপি সমর্থকের সংখ্যাও বিপুল। একটা পর্যায়ে গিয়ে বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ী এমনকি বিএনপি নেতাদের মধ্যে যারা বিএনপি করে শিল্প-কারখানা, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স এবং পরিবহনসহ বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন, তারাও অবরোধ-হরতাল মানেননি। তাদের কলকারখানা, বাস-ট্রাক-লঞ্চ-স্টিমার সব চালু ছিল। তাদেরও প্রচণ্ড চাপ ছিল টানা আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। তারা তাদের সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতির সঙ্গে একাট্টা হয়ে চেষ্টা করেছেন। দেশি-বিদেশি এমন সবার অন্তরালের উদ্যোগেই বরফ গলেছে বলে ধারণা। এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন একটি আশার বাণীও শুনিয়েছিলেন যে, তিন সিটি নির্বাচনের পরে শিগগিরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বাস জেগেছিল মানুষের মনেও। প্রধানমন্ত্রী এ নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার ব্যাপারে দৃঢ় ছিলেন বলে শোনা গেছে। 'তিন সিটিতে পরাজিত হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে'- তার এমন উদার বক্তব্য থেকেই ধারণাটা হয়েছিল যে, পরাজয় মানতেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকারের মধ্যে আরেকটি শক্তিশালী সরকার আছে, যারা প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা সফল হতে দেননি। এরা বোধহয় ভেবেছেন, সিটি নির্বাচনে হারার অর্থ মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়া এবং তাতে সরকারের ব্যাকফুটে চলে যাওয়া; আর মধ্যবর্তী নির্বাচনে যেতে বাধ্য হওয়া। তাদের আশঙ্কা, সেই নির্বাচনে তাদের কপালে দুঃখ আছে। তাই যেনতেনভাবে জেতার বেপরোয়া পদক্ষেপ নেন তারা। অথচ এ নির্বাচনটি ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন। ঢাকা উত্তরে শাসক লীগের সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক খুবই ভালো প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়ালের তুলনায়। তিনি বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন। বিএনপির সমর্থকদেরও বলতে শুনেছি, উত্তরে আনিসুল হক জিতে যাবেন। কিন্তু মানুষের ভোটে, পপুলার গণরায়ে বিজয়ের গৌরবটা উপভোগ করতে পারলেন না আনিসুল হক। এ নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ চতুর্দিকে। বিদেশিরাও তাদের হতাশা, অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কোনো ধরনের রাখঢাক না রেখে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, 'যে কোনো উপায়ে জয় আদৌ জয় নয়।' সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এক টুইট বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। মার্কিন দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, 'সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তার ব্যাপক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।' বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের সব অভিযোগ দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির নির্বাচন বর্জনেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগের সব তীর সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কী করেছে? নির্বাচনটিকে অর্থবহ করার জন্য বিএনপিও কি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত না? বারবার আলোচনায় এসেছে যে, এ নির্বাচনে তিন সিটিতে হেরে গেলেও ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা হারাত না। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। বঙ্গবন্ধু আজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার বড়াইও করেন তারা। কিন্তু এই ভোটের অধিকারের অর্থ যদি এই হয় যে, আপনি একাই এ অধিকার ভোগ করবেন, অন্যকে তা করতে দেবেন না, তা তো গণতান্ত্রিক আচরণ হলো না। আওয়ামী লীগ প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক আচরণ করেনি। নির্বাচন কমিশন আরও বেশি হতাশ করেছে। মনে হয়েছে, তারা সরকার সমর্থক প্রার্থীর কর্মী ও পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। সংঘটিত সব ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করেছে যে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিটি যথার্থ ছিল। অভিযোগ এখন যথার্থ বলেই মনে হচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশন প্রথমে সেনা মোতায়েনের (২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল) সিদ্ধান্ত নিয়ে পরদিনই তা পাল্টে ফেলে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে ফলাফল যাই হোক, নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং ভোট চুরি নিয়ে এত বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। আর বিএনপি? দলটির জনসমর্থন বিপুল; কিন্তু বর্তমানে সাংগঠনিক ভিত্তি একেবারেই নড়বড়ে। নেতারা নয়, কর্মচারীরা দলটি চালায়। সিটি নির্বাচনের দিনও দেখা গেছে বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশটি খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদকে দিয়েছেন একজন কর্মচারী। প্রকৃত ও ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের কোনো মূল্যই নেই। রাজনীতিতে উৎসাহী তরুণরা গুলশান অফিসের কর্মচারীদের ডিঙিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে পেঁৗছতেই পারে না। কমিটি পাস করতেও নাকি টাকা দিতে হয়। ফলে আদর্শবাদী, সৎ কর্মীরা উৎসাহই হারিয়ে ফেলেছেন। চাঁদাবাজ, ধান্ধাবাজ, সুবিধাবাদী আর অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কী রাজনীতিতে ঝুঁকি নেবে? তাই খালেদা জিয়ার ডাকেও সাড়া মেলে না। সংসদ নির্বাচনে দুই দলেই 'টিকিট' বিক্রির কথা শোনা যায়। কিন্তু এবার সিটি নির্বাচনেও নাকি তা-ই হয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নীতিনির্ধারকের(!) বিরুদ্ধেও এ সুযোগে লাখ লাখ টাকা ধান্ধা করার অভিযোগ উঠেছে। জনসমর্থনের দিক বিবেচনায় দলটির যে সাইজ, দলের বর্তমান নেতৃত্ব যদি সঠিক ও সাহসী দায়িত্ব পালন করতেন তাদের নেত্রীর প্রত্যাশা এবং নির্দেশ অনুযায়ী, তাহলে ক্ষমতাসীনরা এ নির্বাচনে যা করেছে তা কী করতে পারত?
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে বিজয়ী নতুন মেয়ররা শপথ নিয়েছেন। ফলাফলের গেজেট ঘোষণা নিয়ে ইসি এত তড়িঘড়ি করল কেন বুঝলাম না। মনে হয় 'ডাল মে কুচ্ কালা হ্যায়'। তারা কী মামলা-মোকদ্দমার আশঙ্কা করেছিলেন? দুর্বলতা না থাকলে এমন আশঙ্কা জাগবে কেন? জনমনে এখন নতুন আতঙ্ক। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য সিটি নির্বাচনকে উপলক্ষ করে দেশে হানাহানির রাজনীতির অবসান ঘটবে বলে মানুষ আশা করেছিল। ধারণা ছিল, গণতন্ত্রের সুরভিত পথ ধরে হাঁটবেন সবাই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রের নামে যে প্রহসন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল, সেই মঞ্চে স্থায়ী পর্দা পড়বে এবং নতুন করে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের আয়োজন শুরু হবে। সমঝোতা, সমন্বয় ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মর্যাদা দেবেন সবাই। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সেই আশা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা বিনাশ করে দিয়েছেন। আপাতত সব শান্ত মনে হচ্ছে। কিন্তু গুমোট বাঁধা ক্ষোভ ও ক্রোধ হঠাৎ বিস্ফোরিত হবে না তা বলা যায় না। সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে তারা এমন নির্বাচনই করতে চাইবে ভবিষ্যতেও- যা অন্যরা মানবে না। সরকারি পরিকল্পনার মূল্যায়ন বিরোধীরা করছে। মানুষ ভাবছে, সিটি নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচন-পূর্ব অবস্থার চেয়েও সংকটময় করে তোলে কি না! বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব ব্যর্থ। এই ব্যর্থ নেতৃত্বের বিকল্পও এত বড় একটা দলে গড়ে উঠবে না এটা ভাবা ঠিক নয়। বিপুল জনসমর্থিত একটি দল পুরনো জঞ্জাল ঝেড়ে ফেলে হঠাৎ জ্বলে উঠতে পারে। তিন সিটি নির্বাচন তেমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে কিন্তু!
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ই-মেইল : [email protected]