রাজনৈতিক অস্থিরতা তেমনভাবে নেই বর্তমান বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ এককভাবেই নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে দীর্ঘ সময় ধরে। যদিও বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন নিয়ে গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘাত হচ্ছে। তবে এটা জনজীবনে তেমন কোন প্রভাব ফেলছে না। বিশেষত রাজনীতি, ভোট থেকে জনগণ আগ্রহ হারিয়েছে তার প্রমাণ মিলে তাদের নির্লিপ্ত ভূমিকা দেখে।
প্রকৃতপক্ষে মানুষ মনে করে "রাজা আসে রাজা যায়" এতে রাঘব বোয়ালরা সকল কালেই লাভবান। আর খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন খুব সহজ নয়। তাই নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর বাজার মূল্যকে হয় সহে যেতে হয়, না হয় ব্যবহারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়।
মানুষের ভালো থাকার শব্দটা এখন কেউ জিজ্ঞেস করলে গড়ভাবে "ভালো আছি" বলার মতো হয়ে গেছে। কারণ গুজব হোক আর ব্যবসায়ীদের মুনাফা লাভের হীন উদ্দেশ্য কিংবা কোন গোষ্ঠীর সরকারকে বেকায়দা ফেলার পাঁয়তারা যাই হোক না কেন; নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থাপনার ভুক্তভোগী কিন্তু দিন শেষে সাধারণ মানুষরা।
এ সাধারণ মানুষরা সমাজের সেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি যাদের কাছে অবৈধ উপার্জনের পথ নেই কিংবা চাইলেও তারা পারে না নিজের বিবেক বোধকে বির্সজন দিতে। আবার আরেক শ্রেণি দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। এরা কেউ চলে মাসিক বেতন দিয়ে হিসাব করে, আর কেউ চলে দিন মজুরি হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে।
পিয়াজ ছাড়া রান্না করা যায় এটা সত্যি। কিন্তু শুধু লবণ মেখে ভাত খাওয়া পরিবার এদেশে এখনো আছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আর সে পরিবারগুলোর কাছে এক টুকরো পিয়াজ কতটা দরকারি তা অনুমান করা বোধকরি কষ্টকর নয়। পিয়াজ নিয়ে হইচই করতে গিয়ে নজর এড়িয়ে যাচ্ছে চালের মূল্য বৃদ্ধিসহ শাক সবজির দাম। আর গুজবের লবণ কাণ্ড একদিনেই আতঙ্ক হয়ে গিয়েছিল। কারণ পিয়াজ না খেয়ে চলে, ভাত না খেয়ে উপোস করা দরিদ্রের জীবনে নতুন কিছু নয় কিন্তু লবণ ছাড়া সব খাবারই বিস্বাদ।
'ক্ষমতা যার দেশ তার' - তাই পরিবহন আইনের ঘোষণার পর পরই এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। যদিও ভোগান্তিতে ফেলে তার আবার শর্ত সাপেক্ষে রাস্তায় চলাচল শুরু করেছে।
জনজীবনের উন্নয়নের মাত্রার বিচার করতে গেলে অসমতার চিত্রটা এখন অনেক বেশি জলন্ত। আর সে কারণে নিত্যকার জীবনের চাকাতে নিষ্পেষিত মানুষের কাছে পিয়াজ ছাড়া ২২ পদের রান্নার কথা বলা হাস্যকর শোনায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রতিকার পাওয়া যায় না। তাই মানুষ ক্রমশ প্রাপ্যটুকু বুঝে নিতে ঘুরে দাঁড়াতে সাহস করে না। তা না হলে এখন অবধি অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা চালাবার সাহস ব্যবসায়ীরা পেত না। ক্যাসিনোর টাকা, ব্যাংকের অর্থ গায়েব, শেয়ার বাজারের টাকা উধাও- এসব টক শো এর আলাপ সাধারণ মানুষ বুঝে না।
উন্নয়নের প্রবৃদ্ধির হার বাড়লে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে একথাটার বাহবা পেতে হলে জনগণের দুই বেলার খাবারে সুনিশ্চিয়তা দেয়াটা জরুরি।
দেশ এবং সরকারকে ভুলে গেলে চলবে না অপশক্তিরা থেমে নেই। তারা তাদের ফায়দা হাসিল করতে জনগণের ভালো থাকাতে আঘাত হানতে পারে এটা কোন অমূলক ধারণা নয়। আর তারই অশনি সঙ্কেত হয়তো বা এই অস্থির বাজার পরিস্থিতি। যা থেকে মানুষের যাপিত জীবনে ' ভালো আছি ' শব্দটি হচ্ছে প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
লেখক: কলামিস্ট
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা