ফেবারিট হয়েও টি-২০ বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ভারত। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যায় ৬ উইকেটে। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারায় ভারত জুড়ে দোষী করা হচ্ছে যুবরাজ সিংকে। শুধু দোষারোপেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি, হামলা হয়েছে তার চণ্ডিগড়ের বাড়িতেও। ফাইনালে যুবরাজ ২১ বলে করেছিলেন মাত্র ১১। যা তার নামের সঙ্গে বেমানান। মাত্র একটি ম্যাচ ভালো খেলেননি, তাতেই এর মধ্যে এই ম্যাচ উইনারের ক্যারিয়ারের অন্ধকার সমাপ্তি দেখে ফেলেছেন। অথচ যুবরাজ ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ভারতকে। ২০০৭ সালে উপহার দিয়েছেন প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ। এছাড়াও অনূর্ধ্ব-১৫, ১৯ বিশ্বকাপও উপহার দিয়েছেন দেশকে। অতীত ভুলে গিয়ে এখন সবাই ব্যস্ত যুবরাজকে বলির পাঁঠা বানাতে। যুবরাজের মতো হয়তো দেশকে কোনো বিশ্বসেরা ট্রফি উপহার দেননি, কিন্তু তিনি যে বাংলাদেশের সেরা পেসার- এ নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো। মাশরাফি বিন মর্তুজা, যাকে সবাই আদর করে ডাকেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস' বলে। টি-২০ বিশ্বকাপ শেষ। অথচ কোনো আলোচনায় নেই মাশরাফি। মোবাইল বন্ধ। যোগাযোগ নেই কারো সঙ্গে। ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, পাকিস্তান ম্যাচের দুঃসহ বোলিং তাকে মর্মাহত করেছে ভীষণভাবে। এরমধ্যে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা ইনজ্যুরিতে মাশরাফির ক্যারিয়ারও শেষ দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।
পাকিস্তান ম্যাচে ৪ ওভারের স্পেলে মাশরাফি রান দেন ৬৩। প্রথম ওভারে ৫ রান দিলেও পরের তিন ওভারে দেন ৫৮! এমন দুঃস্বপ্নের বোলিং দেখা যায়নি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে। স্পেলের দ্বিতীয় ওভারে টানা তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় রান দেন ১৮। দুই ওভারে ২৩ রান দেওয়ার পর তাকে সরিয়ে নেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এরপর ১৬ নম্বর ওভারে ১৬ রান দেন। যার একটি ছিল ওয়াইডসহ ৫ রান। ১৯ নম্বর ওভারে তিন ছক্কায় রান দেন নেন ২৪ রান! ২৮ টি-২০ ক্যারিয়ারে এত বাজে বোলিং কখনোই করেননি নড়াইল এঙ্প্রেস। এমন বাজে বোলিংয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। এজন্য তিনি কারোর সঙ্গে বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। তবে বিসিবির ডাক্তার ডা. দেবাশীষ বলেছেন, 'মাশরাফির স্ত্রী অসুস্থ। পারিবারিকভাবে তিনি এখন বিপর্যস্ত। তাছাড়া তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন।'
শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট নয়, ক্রিকেট বিশ্বেই মাশরাফি এক বিরল প্রতিভার ক্রিকেটার। দুই হাঁটুতে ছয় ছয়টি অপারেশন করানোর পরও খেলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এরমধ্যে সবশেষ অপারেশন করানোর পর ১৮ কেজি ওজন কমিয়েছেন শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলার জন্য। খেলেছেন শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপে। টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আফগানিস্তান ও নেপাল ম্যাচ খেললেও নামেননি হংকংয়ের বিপক্ষে। টপ টেনে চার ম্যাচের তিনটি খেলেছেন। ইনজ্যুরির জন্য খেলেননি অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। এই না খেলায় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে, আসলেই কি মাশরাফি আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারবেন? টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে হংকং ম্যাচ খেলেননি পাঁজরের ব্যথায়। এরপর অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে অংশ নেননি অ্যাজমার সমস্যা ছাড়াও হাঁটুর সমস্যায়। হাঁটুর ফোলাটা এখনও রয়ে গেছে। সেজন্য তাকে রিহ্যাব করার জন্যও ডাকা হয়নি জানান বিসিবির ডাক্তার, 'তার হাঁটুর ফোলাটা এখনো রয়েছে। এটা সারতে আমার মনে হয় আরও এক সপ্তাহ লাগবে। এরপর বোঝা যাবে, তার শারীরিক কন্ডিশন কি?' অবশ্য বিসিবি ডাক্তার জানিয়েছেন, লঙ্গার ভার্সান ক্রিকেট খেললে তার ইনজ্যুরির পরিমাণ বাড়তে পারে। বছর খানেক আগে আগ্রহ নিয়ে জানিয়েছিলেন টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-২০ ক্রিকেট খেলতে চান মাশরাফি। এরমধ্যে দীর্ঘ পরিসরের একটি ম্যাচে বোলিংও করেছেন। কিন্তু তাতে মনে হয়নি টেস্ট খেলার মতো শারীরিক সুস্থ তিনি। ওয়ানডে খেলেছেন। এখন টি-২০ খেলছেন। টি-২০ খেলার মাঝে মধ্যেই ইনজ্যুরির জন্য তাকে মাঠের বাইরে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে। এটাই ভাবিয়ে তুলছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।