ইনজুরির জন্য তিনি ম্যাচ খেলবেন না, জানাই ছিল। কিন্তু মাঠে থাকবেন না, তা কি হয়? প্রিয় দলের খেলা। তার ওপর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ফাইনাল, আবার প্রতিশোধের মিশনও। তাই ময়দানি লড়াইয়ে না থাকলেও গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন ফিফা বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। দলকে উৎসাহ জুগিয়েছেন সমর্থকদের মতো। কালো জিন্স, কালো টি-শার্ট এবং কালো ক্যাপ পরে পরশু রাতে ভ্যালেনসিয়ার মেস্তায়া স্টেডিয়ামে বসে ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন বিশ্বসেরা ফুটবলার। আবার দলের গোলে আনন্দ উদযাপন করেছেন অবুঝ শিশুর মতো। মাঠে না থাকলেও তার উপস্থিতিতেই হয়তো উজ্জীবিত, উদ্দীপ্ত ফুটবল খেলে কোপা দেল রের ১৯ নম্বর শিরোপা জয় করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। কিংস কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে রিয়াল পরশু রাতে ২-১ গোলে হারিয়েছে লিওনেল মেসির বার্সেলোনাকে।
সময়টা একদম ভালো যাচ্ছে না বার্সেলোনার। অথচ সপ্তাহদুই আগে রিয়ালের মাঠে রিয়ালকে কফিনবদ্ধ করেছিলেন মেসিরা। তখন বার্সা সমর্থকদের স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জয়ের ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন বার্সার আর্জেন্টাইন তারকা। ওই জয়ের পরই খেই হারিয়ে ফেলেন কাতালানরা। নেমে আসেন আকাশ থেকে জমিনে। হারতে থাকেন একের পর এক ম্যাচ। প্রথমেই বিদায় নেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হেরে খেলা হয়নি টানা সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল। এরপর লা লিগায় পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকের দল গ্রানাডার কাছে হেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বার্সা। নিজেদের ফিরে পেতে পরশু রাতে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলতে নামেন কাতালানরা। ইনজুরি নিয়েই মাঠে নামেন মেসি। কিন্তু ছায়াই মনে হয়েছে তাকে। প্রতিপক্ষের ওপর কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেননি। দলের আরেক তারকা ব্রাজিলের নেইমারকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি তেমন একটা। অথচ রোনালদোবিহীন রিয়ালের বিপক্ষে ফেবারিট থাকার কথা ছিল বার্সার!
মেয়াস্তা স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই শিরোপা জিততে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকেন অ্যানজেল ডি মারিয়া, গ্যারেথ বেলরা। রোনালদো না থাকায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেল ছিলেন দুর্দান্ত। দলকে নিয়ে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে বিপর্যস্ত করেছেন ওয়েলসের এই তারকা ফুটবলার। খেলার ১০ মিনিটেই বার্সার রক্ষণভাগে জর্ডি আলভার ভুলে এগিয়ে যায় রিয়াল। আলভারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে দলের ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার করিম বেনজামা ডিফেন্স চেড়া পাস দেন ডি মারিয়াকে। মারিয়া বল ধরে বার্সার রক্ষণভাগের একজনকে কাটিয়ে আড়াআড়ি শটে গোল করেন (১-০)। ১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বার্সা। ৬৮ মিনিটে সমতা আনেন মেসিরা। জাভির কর্নারে হেড করে সমতা আনেন মার্তা বারত্রা (১-১)। খেলা যখন অতিরিক্ত সময়ের দিকে গড়াচ্ছিল, তখনই শিরোপা নিশ্চিত করেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার বেল। মধ্যমাঠ থেকে বল ধরে একক প্রচেষ্টায় বার্সার গোলরক্ষক পিন্টোকে পরাস্ত করে দলকে প্রিন্স কাপের শিরোপা উপহার দেন ওয়েলস স্ট্রাইকার (২-১)। অবশ্য দুই মিনিট পরই গোল শোধের একটি সুযোগ পেয়েছিল বার্সা। কিন্তু নেইমারের শটটি রিয়ালের গোলপোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বার্সাকে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় রিয়ালের সামনে এখন ট্রেবল জয়ের হাতছানি। কোপা দেল রে ছাড়া এখন সামনে রয়েছে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। অন্যদিকে, ২০০৬-০৭ মৌসুমের পর শিরোপাবিহীন থাকতে হতে পারে বার্সেলোনাকে।