ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে সব বাধা অতিক্রম করা যায় তার বড় প্রমাণ হচ্ছে রাগবি। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বিশ্বে ফুটবলের পরেই রাগবির অবস্থান। অথচ বাংলাদেশে এ খেলার অভিষেক ঘটেছে মাত্র সাত বছর আগে। সত্যি বলতে কি শ্রীলঙ্কা ছাড়া উপমহাদেশে রাগবির জনপ্রিয়তা তেমন নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে এ খেলা ছিল বিদেশি দূতাবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ছুটির দিনে গুলশান কূটনৈতিক পাড়ায় মাঝেমধ্যে রাগবির আসর বসত। দেশে সংগঠকদের অভাব না থাকলেও কেউ কোনোদিন রাগবিকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেননি। ২০০৬ সালে মৌসুম আলীই নিজ উদ্যোগে রাগবি অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। ক্রীড়াঙ্গনে মৌসুমের পরিচয় মূলত হ্যান্ডবল সংগঠক হিসেবেই। আশির দশকে দেশের হ্যান্ডবল ফেডারেশন গড়ার পেছনে যে কজন ভূমিকা রাখেন তাদের মধ্যে মৌসুমের সাহসী ভূমিকার কথা ভুলবার নয়।
দেশের ফেডারেশনের মধ্যে ক্রিকেট যে সবচেয়ে ধনী তা নিয়ে কারোর সংশয় নেই। কিন্তু গরিবি তালিকায় আবার ১ নম্বর স্থান রাগবিরই। অর্থ নেই তারপরও এ খেলার চাকা এতটা সচল যে অনেকে অবাক না হয়ে পারছেন না। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তিন বছর ধরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে বার্ষিক অনুদান পাচ্ছে। ফেডারেশনের স্বীকৃতি মিলেছে গত বছরই। প্রথম দু'বছর ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও এবার বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা ফেডারেশন চলে কীভাবে? এ ব্যাপারে রাগবি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলী বলেন, অর্থের অভাব, তাই বলেতো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাগবির যাত্রা হয়েছে তাই আমরা চাচ্ছি এ খেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে। আসলে প্রতি বছর রাগবি যে কর্মসূচি পালন করছে তা অনেক ধনী ফেডারেশনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৬ সালে রাগবির কর্মসূচি ট্রেনিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০০৭ সাল থেকে মাঠে নামে তারা। শুরুতে ২/১টা হলেও বছরে এখন ৯টি টুর্নামেন্ট হচ্ছে। মিনি রাগবি, স্কুল রাগবি, কলেজ রাগবি, ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়ন, রাগবি সেভেন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ফেডারেশন কাপ ও জাতীয় প্রতিযোগিতা ছাড়াও জুন থেকে প্রথম বিভাগ লিগ শুরু করার চিন্তাভাবনা চলছে। এসব টুর্নামেন্টে স্পন্সর আছে কিন্তু তা নামমাত্র। মৌসুম স্বীকার না করলেও রাগবিকে মাঠে রাখতে এ ফেডারেশনের ঋণের পরিমাণ নাকি প্রায় ১৮ লাখ টাকা। একেতো অর্থের অভাব তারপর আবার খেলা চালানোর জন্য রাগবিকে যাযাবরের মতো মাঠ খুঁজতে হয়। রাগবির জনপ্রিয়তার দেখে সেনাবাহিনী এখন জাতীয়সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে মোহামেডান, আবাহনীর মতো জনপ্রিয় দল রাগবিতে আসছে বলে মৌসুম জানান। শুধু খেলা নয় রাগবিতে নিয়মিত ট্রেনিং প্রোগ্রামও চলছে। মার্চে আন্তর্জাতিক রাগবি অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতার ইংল্যান্ড থেকে ফিলিপ ওয়াইজ নামে একজন প্রশিক্ষক আসেন। প্রায় এক মাস অবস্থানকালে এ কোচ নড়াইল, বাগেরহাট, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামে খেলোয়াড় ও কোচদের প্রশিক্ষণ করান। প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশে রাগবি যে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে বিশ্বে রাগবির অভিভাবক সংস্থা সন্তুষ্ট। এক সময় রাগবি সীমাবদ্ধতা ছিল পল্টন ময়দানেই। এখন প্রতিটি জেলায় এ খেলা শুরু হয়েছে। ফান্ড ও অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও রাগবির গতি থেমে নেই।