চ্যাম্পিয়ন হতে হলে জিততেই হবে- এমন সমীকরণের মারপ্যাঁচে নেই ঢাকা বিভাগ। শুধু চার পয়েন্ট পেলেই হবে। আবার পেছনে পেছনে ছুটতে থাকা রাজশাহী বিভাগ যদি ড্র করে, কিংবা হেরে যায়, তাহলেও চ্যাম্পিয়ন হবে ঢাকা। এমন হিসাবে শিরোপার মঞ্চ তৈরি করে নিতেই পারেন মোহাম্মদ শরীফ, তাইবুর রহমান পারভেজ, আবদুল মজিদ, নাজমুল অপুদের ঢাকা।
ওয়ালটন জাতীয় ক্রিকেটের ১৫ নম্বর আসরের শেষ রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ। আট দলের এই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট পাঁচ রাউন্ড হওয়ার পর বন্ধ হয়ে পড়েছিল এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য। প্রায় ৬ সপ্তাহ বন্ধ ছিল। ১২ এপ্রিল আবারও মাঠে গড়ায়। ষষ্ঠ রাউন্ডে চার ম্যাচেই ফলাফল হয়। আজ শুরু সপ্তম ও শেষ রাউন্ড। কক্সবাজার স্টেডিয়ামে শিরোপা প্রত্যাশী ঢাকা মুখোমুখি হচ্ছে খুলনার। চট্টগ্রামে আরেক শিরোপা প্রত্যাশী রাজশাহীর প্রতিপক্ষ ঢাকা মেট্রোপলিটন। ফতুল্লায় খেলবে রংপুর ও বরিশাল এবং বিকেএসপিতে মুখোমুখি হয়েছে সিলেট-চট্টগ্রাম।
আসরের গত রাউন্ডে অংশ নেননি জাতীয় দলের সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইন্ডিয়া প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলতে সাকিব এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আইপিএলের প্রথম ম্যাচে সাকিবের দল হারিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে। মাশরাফি খেলবেন না ইনজুরির জন্য। অন্যদিকে আগের রাউন্ডে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ব্যথা পাওয়ায় দুই সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হচ্ছে জাতীয় দলের বাঁ হাতি ওপেনার তামিম ইকবালকে। ফলে জাতীয় ক্রিকেটের শেষ রাউন্ডে খেলা হচ্ছে না তামিমের। এ ছাড়া জাতীয় দলের অন্যসব ক্রিকেটারই খেলবেন এই রাউন্ডে।
আট দলের এই টুর্নামেন্টে ১১১ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে ঢাকা। ২১ পয়েন্ট পিছিয়ে রাজশাহী। তৃতীয় স্থানে থাকা খুলনার পয়েন্ট ৮০, রংপুরের পয়েন্ট ৬৯, সিলেটের ৬৪, ঢাকা মেট্রোপলিটনের ৫৭, চট্টগ্রামের ৪৩ এবং বরিশালের পয়েন্ট ২৮। চ্যাম্পিয়ন দল আর্থিক পুরস্কার পাবে ২০ লাখ টাকা। রানার্সআপ প্রাইজমানি ১০ লাখ। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন খুলনার এবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। গত আসরের রানার্সআপ ঢাকার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। চ্যাম্পিয়ন হলে পুরো টাকাই ক্রিকেটারদের দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা বিভাগীয় দলের ম্যানেজার আলী হোসেন, 'আমরা গতবার রানার্সআপ হয়েছিলাম। প্রাইজমানির পুরোটাই দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ক্রিকেটারদের। এবার চ্যাম্পিয়ন হলেও ২০ লাখ টাকা প্রাইজমানি ক্রিকেটারদের মাঝেই বিলিয়ে দেওয়া হবে।' ঢাকার অধিনায়ক মোহাম্মদ শরীফ বলেন, 'আমরা জয়ের জন্য খেলব। যদিও আমরা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছি। তারপরও আমরা পয়েন্টের হিসাব মাথায় রেখেই খেলব।'
জাতীয় ক্রিকেটের এবারের আসরে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা নিয়মিত খেলেননি। জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটাররাই নিয়মিত পারফরম্যান্স করেছেন। ঢাকার ওপেনার আবদুল মজিদ এখন পর্যন্ত আসরের সেরা পারফরমার। ১১ ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরিসহ তার রান ৬১৪। এরপর রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটনের আসিফ আহমেদ রাতুল ৫৫৬, খুলনার তুষার ইমরানের রান ৫২২। জাতীয় দলের আরেক ক্রিকেটার শুভাগত হোমের রান ৪৫৯। জাতীয় দলে খেলছেন এমন ক্রিকেটারের মধ্যে সর্বোচ্চ রান অলরাউন্ডার মার্শাল আইয়ুবের ৬ ম্যাচে ৩৮০। গত রাউন্ডে ফরহাদ রেজা ২৫৯ রান করেছেন চট্টগ্রামের বিপক্ষে। একই ম্যাচে এক ইনিংসে ১৬ ছক্কার রেকর্ড গড়েছের মুক্তার আলী। সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মজিদ।
আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট বরিশালের মনির হোসেনের ২৮টি। ঢাকার নাজমুল ইসলাম অপুর উইকেট ২৭টি। জাতীয় দলের বাঁ হাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক রাজ খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ। গত রাউন্ডে তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে উইকেট নিয়েছেন ১৩টি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৯১ রানে ৯ উইকেট। মজার বিষয় হচ্ছে জাতীয় লিগের শীর্ষ পাঁচ বোলারের চারজনই বাঁ হাতি স্পিনার। মনির, অপুর পর ২৪ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়র এবং ২৩ উইকেট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন নাবিল সামাদ।