দৈনন্দিন জীবনে ক্ল্লান্তিবোধ হওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে, পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ না করলে, ঠিকমতো গভীর ঘুম না হলে মানুষ ক্লান্তিবোধ করে। কিন্তু এ ক্লান্তিবোধ স্বল্প সময় থাকে এবং সঠিকভাবে খাবার খেলে, ঘুমালে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম না করলে এ ক্লান্তিবোধ কেটে যায়। কিন্তু কেউ যদি সব সময় ক্লান্ত থাকে এবং তা যদি অনেক দিন থাকে তাহলে বিষয়টি খুবই চিন্তনীয়। ক্লান্তিবোধের কিছু কারণ আলোচনা করা হলো-
হৃদযন্ত্রের সমস্যা : হার্টের ভাল্বের সমস্যা (Valvular heart diseases) হার্টের কার্যকারিতা কমে গেলে, হার্টের রক্ত চলাচল কমে গেলে (IHD) রোগী ক্লান্তিবোধ করে। ক্লান্তির সঙ্গে রোগীর শ্বাসকষ্ট, পা ফুলে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি লক্ষণগুলোও থাকে।
হরমোনের সমস্যা : থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা বেড়ে গেলে অথবা কমে গেলে, ডায়াবেটিস হলে রোগীরা ক্লান্তিবোধ করে। এসব ক্ষেত্রে রোগীর প্রচুর প্রস াব হওয়া, পিপাসা পাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, শুকিয়ে যাওয়া, শরীরে ব্যথা, গলার স্বর ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকে।
রক্ত শূন্যতা : আয়রন ও ভিটামিনের অভাবে শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিন (Hb) কমে যায়, ফলে সব সময়ই খুব ক্লান্ত লাগে। এসব ক্ষেত্রে রোগীর রোগের ইতিহাস ঠিকমতো নিয়ে ও শারীরিক লক্ষণগুলো পর্যালোচনা করলে রক্ত শূন্যতার কারণ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া য়ায়।
মানসিক সমস্যা : অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, সব সময় জীবনের খারাপ দিকগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ইত্যাদি কারণে মানুষ খুবই ক্লান্তিবোধ করে।
ঘুমের সমস্যা : কোনো কারণে যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যেমন : ক) সঠিক মাত্রায় ঘুম না হয়, খ) গভীর ঘুম না হয়, গ) ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় (Sleep apnea) তাহলে রোগী পরবর্তীতে খুবই ক্লান্তিবোধ করে।
ওষুধজনিত ক্লান্তিবোধ : কিছু কিছু ওষুধ যেমন- বিষণ্নতার ওষুধ ঘুমের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অনেক দিন সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ ক্লান্তিবোধ করে।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম : এটি একটি রোগ- যাতে রোগী ক্লান্তিবোধ করে এবং তার দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা কমে যায়। এটি সাধারণত মহিলা ও যুবকদের বেশি হয়।
ভাইরাস জ্বর :Infectious mononucleosis একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এতে রোগীর জ্বর হয়, গলা ব্যথা হয়, গায়ে র্যাশ হয়, লিভার, প্লীহা বড় হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা দীর্ঘদিন ক্লান্তিবোধ করতে পারে।
ক্লান্ত লাগলে করণীয় : সব সময় ক্লান্তিবোধ হলে রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এর কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা যায়, তাহলে রোগীর জন্য মঙ্গল।
লেখক : বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা ফোন : ০১৭১১-১৭১৬৩৪