দেখতে দেখতে পেশাদার ফুটবল লিগে সপ্তম মৌসুমে পা দিয়েছে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে এ লিগ শুরু হওয়ার আগে বাফুফের তৎকালীন সভাপতি এস এ সুলতান দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, প্রথম দিকে না হলেও ফিফা বা এএফসি যে গাইড লাইন বেঁধে দিয়েছে তা অনুসরণ করেই লিগ অনুষ্ঠিত হবে। যারা মানবে না তারা অংশ নিতে পারবে না। সুলতান সম্ভবত ব্যাপারটি ভালোমতো উপলব্ধি করতে পারেননি। যে গাইড বা শর্ত দেওয়া হয়েছে তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো ক্লাবের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। তাই শর্তহীনভাবেই লিগ এগিয়ে চলেছে। যেমন শর্ত দেওয়া আছে পেশাদার লিগে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ক্লাবের নিজস্ব মাঠ, জিম ও খেলোয়াড়দের পেমেন্টের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। বাস্তবে নিজস্ব মাঠ ও ক্লাবের জিম থাকাটা দেশের প্রেক্ষাপটে স্বপ্নই বলা যায়। ক্লাবতো দূরের কথা স্বাধীনতার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাফুফে নিজস্ব জিম স্থাপন করতে পারেনি। বিদেশি কোচরা যখন দায়িত্ব নেন তখন শুনে অবাক হয়ে যান ফিটনেসের জন্য ফুটবলারদের আলাদা কোনো জিম নেই। সেক্ষেত্রে ক্লাবগুলো পেশাদার লিগের শর্ত মানবে কীভাবে?
সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশে যেভাবে পেশাদার লিগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাতে বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ বিশ্বের আর কোনো দেশে এত কমসংখ্যক দল নিয়ে লিগ আয়োজন হয় না। তারপর আবার শুধু ঢাকায় ক্লাবের ছড়াছড়ি। প্রথমদিকে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটের একটি করে ক্লাব অংশ নিলেও বর্তমানে চট্টগ্রাম আবাহনী ও ফেনী সকার রয়েছে। শর্তের কথা বললে কোনো ক্লাবই তা মানছে না। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান অভিষেক লিগ চলাকালে জোর গড়ায় বলেছিল যে সব শর্ত রয়েছে তা তারা তিন বছরের মধ্যেই পূরণ করতে পারবে। চারদলীয় জোট ক্ষমতা থাকা অবস্থায় সাভারে মোহামেডানকে বড় মাপের জমি বরাদ্দ করে। তৎকালীন ক্লাব সভাপতি মোসাদ্দেক আলী ফালু ও সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ভূঞা ঘোষণা দিয়েছিলেন অচিরেই ক্লাবের নিজস্ব কমপ্লেঙ্ নির্মিত হবে।
সেখানে নিজস্ব প্র্যাকটিস মাঠ, জিম ও সুইমিংপুল থাকবে। মূলত এ কমপ্লেঙ্কে ঘিরে আশা করা হয়েছিল মোহামেডান পেশাদার লিগের শর্ত পূরণ করবে। শুধু তাই নয় ক্লাব থেকে ঘোষণা এসেছিল সাভারে মাঠ তৈরি হওয়ার পর এটি হবে ক্লাবের হোম ভেন্যু। বাস্তবে সাভারে এ কমপ্লেঙ্রে কোনো খবরই নেই। মতিঝিলের ক্লাব ভবন নিয়ে নানা পরিকল্পনার ঘোষণা এসেছিল। লিমিটেড কোম্পানি গঠনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই লোকমান বলেছিলেন, এখানে খুব শীঘ্রই বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এই ভবনের ভাড়া থেকেই ক্লাবের স্থায়ী ফান্ডের বন্দোবস্ত হবে। অর্থের জন্য কারোর কাছে হাত পাততে হবে না। আসলে পেশাদার লিগের শর্ত পূরণে অনেক উপায় খুঁজে পেয়েছিল মোহামেডান। কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়াতে মোহামেডানকে এখন যাযাবরের মতো ঘুরে প্রশিক্ষণ করতে হচ্ছে। ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ দেশের বাইরে থাকাতে এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন ফুটবল দলে ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা আমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, আমাদের অনুশীলনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সামরিক জাদুঘর মাঠে নিয়মিত প্রশিক্ষণ চলছে। সমস্যা হলে আবার অন্য মাঠে চলে যায়। আর পেমেন্টের কথা যদি বলেন, মোহামেডান কারো বকেয়া বাকি রাখেনি। প্রয়োজন পড়লে খেলোয়াড়দের জিমেও নিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং শর্ত পূরণ করেই ক্লাব লিগে অংশ নিচ্ছে একথা জানান বাবু। প্রশ্ন ছিল নিজের বদলে যেখানে ভাড়া মাঠে অনুশীলন করছেন সেখানে শর্ত পূরণ হলো কীভাবে? বাবু বলেন, এ বিষয়টি ক্লাবের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবও এখনো নিজস্ব মাঠ তৈরি করতে পারিনি। কবে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।