স্পিনারদের নিয়ে একটা 'বিভ্রান্তি' চালু আছে! বাউন্সি ও দ্রুতগতির উইকেটে নাকি 'ঘূর্ণি বোলিং' কাজ করে না -এমন ধারণা অনেকের। সত্যিই কী তাই? এটা ঠিক যে, উপমহাদেশের ধীরগতির উইকেট স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য। কিন্তু বাউন্সি ও দ্রুতগতির উইকেটেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন স্পিনাররা। তার বড় উদাহরণ তো শেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই বোলার দ্রুতগতির উইকেটে বোলিং করেই তো স্পিন জগতের সম্রাট। তাই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে যে স্পিনাররাও ম্যাচ জয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন -তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
অবশ্য ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের কিংবদন্তি স্পিনার মুশতাক আহমেদ মন্তব্য করেছেন, এবারের বিশ্বকাপে স্পিনাররা চমক দেখাতে পারেন। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপকে যারা 'পেসারদের বিশ্বকাপ' বলে মন্তব্য করছেন, তারা বোকার স্বর্গের বাস করছেন বলে দাবি পাকিস্তানি তারকার। এটা ঠিক যে, ধীরগতির উইকেটে অনেক বেশি টার্ন পান স্পিনাররা। ইচ্ছা মতো বল ঘোরাতে পারেন। কিন্তু বাউন্সি উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ছন্দপতন ঘটাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন স্পিনাররা। দ্রুতগতির বল মোকাবিলা করতে করতে হঠাৎ স্পিন খেলতে ইতস্ততবোধ করেন ব্যাটসম্যানরা। আর তখনই খেলে ফেলেন ভুল শট। তবে বাউন্সি উইকেটে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে হলে স্পিনারকে অনেক বেশি কৌসুলি হতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ যে স্পিন শক্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে, তারা কি পারবে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই করে টিকে থাকতে? এবারের বিশ্বকাপে দেখা যাবে তো বাংলাদেশের চিরাচরিত সেই 'স্পিন চমক'!
বাংলাদেশের চূড়ান্ত দলে বিশেষজ্ঞ স্পিনার তিনজন- সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম ও আরাফাত সানি। সাকিব ছাড়া বাকি দুইজন একেবারেই তরুণ। আরাফাত সানি খেলেছেন আটটি ওয়ানডে, তাইজুল খেলেছেন মাত্র একটি। জাতীয় দলের হয়ে বিদেশের মাটিতেও খেলার অভিজ্ঞতা নেই তাদের। এই স্পিন শক্তি কী পারবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রভাব বিস্তার করতে! তাই বাংলাদেশের সেরা অস্ত্র 'স্পিন' দিয়ে বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার ব্যাপারে সন্দিহান অনেকেই!
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে গত সিরিজে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে তাইজুলের। খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ। আর প্রথম ম্যাচেই করেছেন বাজিমাৎ। অভিষেকেই হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নিয়ে ক্রিকেটের রেকর্ডবুকে নতুন অধ্যায় খুলেছেন। সে কারণেই বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত দলেও জায়গা পেয়ে যান। কিন্তু ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে ভালো করলেই যে অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটেও ভালো করবে -এমন তো নয়! আর আরাফাত সানি ৮ ওয়ানডেতে ১৬ উইকেট নিয়েছেন। তবে তিনি দলে সুযোগ পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে শেষ তিন ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করার জন্য। কিন্তু দেশের বাইরে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তাকে নিয়েও আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ও শাহরিয়ার নাফিস মনে করেন, দলে একসঙ্গে দুই দুজন তরুণ স্পিনারকে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। একজন তরুণ স্পিনারের জায়গায় অভিজ্ঞ রাজ্জাককে নিলে স্পিন শক্তি আরও বেড়ে যেত।
তবে আশার কথা হচ্ছে, দেশের সেরা স্পিনার সাকিব এখন অস্ট্রেলিয়ার টি-২০ টুর্নামেন্ট 'বিগ ব্যাশ' খেলছেন মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে। গতকাল তিনি উইকেটও পেয়েছেন দুটি। সাকিবের এই অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে দারুণ কাজে লাগবে। তাছাড়া দলে বেশ কয়েকজন পার্টটাইম স্পিনারও রয়েছেন। অতীতে অনেক ম্যাচেই দেখা গেছে, ১০ ওভার দাপটের সঙ্গেই বোলিং করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এছাড়া নাসির, সাব্বির এমনকি দলের প্রয়োজনে স্পিন করেন মুমিনুল হকও।