অনুশীলন শেষ। পড়ন্ত বিকালে ক্রিকেটাররা ড্রেসিং রুমে ফিরে যে যার মতো হোটেলে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোচ হাতুরাসিংহে নিজের ফিটনেস পরখ করে নিয়ে স্টেডিয়ামের চারপাশে চক্কর দিচ্ছেন। ঠিকই তখনই প্যাড পড়ে ব্যাট হাতে নেটে হাজির মাশরাফি বিন মতুর্জা। অপরিচিত একজনকে বল করতে বললেন। তারপর একের পর এক বল শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ফেলতে লাগলেন।
অধিনায়ক মাশরাফি এবং বোলার মাশরাফিকে ছাপিয়ে অনুশীলনে ‘ব্যাটসম্যান মাশরাফি’ নির্বিকারভাবে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম ম্যাচে বল হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর নড়াইল এক্সপ্রেস আজকের ম্যাচকে যেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তবে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে মাশরাফি বোলার নন, শুধুই একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান! ২২ গজে যিনি ব্যাট হাতে কাঁপিয়ে দেবেন প্রতিপক্ষকে।
একটা সময় ছিল, যখন মাশরাফি ব্যাট হাতে মাঠে নামলেই গ্যালারী উচ্ছ্বাসে কেঁপে উঠতো। কিন্তু ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত মাশরাফি নিজের ব্যাটিং সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়ে বসেছিলেন। বোলিং আর নেতৃত্ব নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ মাশরাফির ব্যাটিং সত্ত্বাকে আবার নতুন করে জাগিয়ে দিয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে চিটাগং ভাইকিংসের বিরুদ্ধে তার ব্যাটের ক্যারিশমার কথা কে না জানে! নেতৃত্ব ও বোলিং দুই বিভাগেই নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার পরও যখন দল হারতে বসেছিল তখন বেরিয়ে আসে ম্যাশের ব্যাটিং সত্ত্বা। মাত্র ৩৬ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে মাঠ থেকে বের হয়েছিলেন মাশরাফি। স্বপ্নিল সেই ইনিংসের কথা মনে পড়তেই কিনা ব্যাটিং সত্ত্বাকে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে শনিবার ব্যাটিং নিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলেন বাংলাদেশ দলপতি।
মাশরাফি প্রথমে বোলার, তারপর অধিনায়ক। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে সুবিধা করতে না পারলেও নেতৃত্ব দিয়ে ঠিকই বাজিমাৎ করে দিয়েছেন। অনেকের মনে হতেই পারে, ওই ম্যাচে মাশরাফির কৃতিত্ব কোথায়?
একটু ভাবুন তো, ১৬ ওভারে দুই উইকেটে জিম্বাবুয়ের রান ১৪২ হওয়ার পর কে ভেবেছিল চিগুম্বুরাদের ১৬৩ রানে আটকানো সম্ভব! বরং তখন মনে হচ্ছিল, জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্বে হয়তো প্রথমবারের মতো দুই শতাধিক রানের স্কোর করতে চলেছে। কিন্তু মাশরাফির দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই জিম্বাবুয়েকে আটকানো সম্ভব হয়েছিল।
শেষ চার ওভার বোলিং করানোর জন্য দুই পেসার আল আমিন ও মুস্তাফিজুর রহমানের দুটি করে ওভার রাখা হয়েছিল। আর এই দুই পেসারই বাজিমাত করে দেন। শেষের চার ওভারে ২১ রানের বেশি নিতে দেয়নি জিম্বাবুয়েকে। মূলত তখনই ম্যাচটা হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছিল সফরকারীদের। এখানে দুই পেসারকে প্রধান ভূমিকায় দেখা গেলেও নেপথ্য নায়ক কিন্তু মাশরাফিই।
এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজকে ‘এক্সপেরিমেন্ট’ হিসেবে নিয়েছেন মাশরাফি। সে কারণেই ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো সেই পরীক্ষার অংশ হিসেবে নিজের ব্যাটিং শৈলীকেও সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন ম্যাশ। আর এই প্রচেষ্টায় মাশরাফি সফল হলে সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে তখন অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে অলরাউন্ডার মাশরাফিকে পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।
মাশরাফি যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক পরশ পাথরের নাম! যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন। সেই বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে মাশরাফির নেতৃত্বের একের পর সাফল্যের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সব শেষ বিপিএলেও সাদামাটা এক দল নিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে চ্যাম্পিয়ন করে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।
এবার জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজে ‘অন্য’ চ্যালেঞ্জেও নড়াইল এক্সপ্রেস সফল হোক– এমনই প্রত্যাশা এখন দেশবাসীর।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ জানুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব