সৌরজগতের আরও এক জায়গায় প্রাণের সন্ধান মিলতে পারে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এক জায়গায় পানি তরল অবস্থায় রয়েছে বলে সম্প্রতি জানা গেছে। আর অন্য এক 'ডেস্টিনেশন'-এ অতলান্ত পানির 'হদিস' তো মিলেছেই, সেখানে পানির নিচে অন্তত তিনশ' কোটি অণুজীব থাকার সম্ভাবনাও রীতিমতো জোরালো হয়েছে। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায় বরফের চাদরের নিচে পানি রয়েছে। আর পানি থাকলেই তাতে প্রাণের সন্ধান থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। শুধু তাই নয়। এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে পৃথিবীর আবহাওয়ারও সাদৃশ্য পেয়েছেন তারা।
ব্রাজিলের ন্যাশনাল সিনক্রোট্রন লাইট ল্যাবরেটরির গবেষক ডগলাস গ্যালানটে জানিয়েছেন, তারা ইউরোপায় ব্যবহারযোগ্য শক্তির খোঁজ করছিলেন। পৃথিবীর পরিবেশের উপর ভিত্তি করে যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, তা দিয়েই চলছিল গবেষণা।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গের কাছে মপেং গোল্ড মাইনে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২.৮ কিলোমিটার গভীরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর প্রাণ নিয়ে সেখান থেকে অনেক তথ্য মিলেছে। তার সঙ্গে ইউরোপার অনেক মিল। মাইনে এক রকম তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটি পানির অণুকে মৌলে ভেঙে দেয়। সেই মৌলগুলো আশপাশের পাথরগুলোকে আকৃষ্ট করে ও সালফেট তৈরি করে।
ব্যাকটেরিয়া সেই সালফেটগুলোকে সিন্থেসাইজ করে ও শক্তি মজুত করে। এই প্রথমবার পারমাণবিক শক্তি হিসেবে সরাসরি ইকোসিস্টেমের সন্ধান পাওয়া গেল।
গবেষকদের মতে, ওই মাইনের এখন যা অবস্থা, ইউরোপার সমুদ্রেরও একই অবস্থা। ইউরোপার পৃষ্ঠদেশের তাপমাত্রা ঠিক শূন্য। এর কেন্দ্রে অনেক তাপশক্তি সঞ্চিত রয়েছে। জুপিটারের শক্তিশালী মার্ধাকর্ষণ শক্তির কারণে ইউরোপার কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এটি গ্যাসীয় অবস্থার হয় খুব কাছে, নয় খুব দূরে। এখনও তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, উপগ্রহের তাপমাত্রা এখন পানিকে বাষ্প করার জন্য যথেষ্ট নয়।
পৃথিবীর যে সব বায়োলজিক্যাল পরিবর্তন আজ পর্যন্ত জানতে পারা গেছে, তার সঙ্গে মিল রয়েছে ইউরোপার। পৃথিবীতে মৌল, আয়ন বা ইলেক্ট্রন যেভাবে পরিবর্তন হয়েছে, সেভাবেই ওই উপগ্রহতেও পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানান গবেষকরা। সুরাপনোভা বিস্ফোরণের সময় যে ধাতুগুলো বের হয়েছিল, সেই একই তেজস্ক্রিয় ধাতুর সন্ধান ইউরোপায় পাওয়া গেছে।
গবেষণায় ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইউরোপায় যে সমুদ্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, তা কয়েক কোটি বছর আগে পৃথিবীর অবস্থার সমান। অতীতের পৃথিবীর সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্য ইউরোপার। ফলে এখানে যে প্রাণ থাকতে পারে, তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এনায়েত করিম