আকাশচুম্বী গগণ শিরীষ গাছের ডালপালা বেয়ে মতিহারের সবুজ চত্বরে নেমে আসে হিমবুড়ি। তার সঙ্গে নিয়ে আসা পুটলি থেকে কুয়াশা ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতির বুকে। তাই চারিদিকে তৈরি হয় জুবুথুবু অবস্থা। কিন্তু শীতের বুড়িকে হার মানিয়ে দেয় তারুণ্যের পদচারণা। ক্লাস-পরীক্ষা আর আড্ডাবাজিতে মেতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস।
কিন্তু নতুন বছরের শুরু থেকেই শীতের ছুটি শুরু হয়ে গেছে রাবিতে। তাই বন্ধ ক্লাস ও পরীক্ষা। এই সুযোগে অনেকেই ছুটেছেন বাড়ির পানে। এতে করে ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। কিন্তু তাতে থেমে নেই আড্ডাবাজি। হল খোলা থাকায় অনেকেই থেকে গেছেন ক্যাম্পাসে। আর অনেক শিক্ষার্থী আবার কয়েকদিন পরিবার আর এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়ে ফিরে এসেছেন প্রিয় ক্যাম্পাসে।
তাল তমালের ছায়ায় ইবলিশ চত্বরের শান বাঁধানো পুকুর পাড়ে গিটারে সুর তুলছেন রিয়াদ। আর তার পাশে গলা ছেড়ে গান গাইছেন রাখি, রাজীব, শহীদ আরো অনেকে। একটু দূর থেকে ভেসে আসছে পোলাও-মাংসের মিষ্টি গন্ধ। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বন্ধ ক্যাম্পাসে বন্ধুরা মিলে আয়োজন করেছে পিকনিক। কিন্তু রান্নার ধুয়ায় চোখ অন্ধকার অপুর। রাগে চেঁচাচ্ছে সে। ‘গান বাদ দিয়ে আমার সঙ্গে হাত লাগাবি নাকি রান্না বাদ দিয়ে আমি আসবো।’ এই হুঙ্কারের পর আর থাকার উপায় নেই। তাই দৌড় দিল সবাই।
এই পিকনিকের কথা বলতে গিয়ে রাখি জানান, ‘ছুটিতে বাড়ি চলে গেছে সবাই। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দুদিন পরেই আবার ক্যাম্পাসে আসতে ইচ্ছে করে। তাই আর এবার ছুটিতে বাড়ি যাই নি। আমার বন্ধুদেরও একই অবস্থা। সবার দৈনিক রুটিন হলো ১২টা পর্যন্ত ঘুম আর তারপর রুমে কিছু রান্না করে খেয়ে সব বন্ধুরা মিলে ঘুড়তে যাওয়া। হঠাৎ আমার মাথায় বুদ্ধি আসল প্রতিদিন দুপুরে সবাই একসঙ্গে রান্না করে খেলে কেমন হয়? বলতেই সবাই আরো আইডিয়া যোগ করলো। যে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পিকনিক করলে কেমন হয়? তো এই প্রস্তাবে সবাই রাজি। সেই সিদ্ধান্ত মতোই আজ পিকনিক চলছে ইবলিশ চত্বরে। আগামীকাল পিকনিক করবো চারুকলায়। এভাবেই চলবে যতদিন আমাদের মাথায় নতুন কোন ফন্দি না আসে।
আরেকটু এগিয়ে যেতেই শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে থেকে ভেসে আসে হুল্লোড় আর ঢোলের বাদ্য। মাঝখানে কাঠের কিছু টুকরা, কাগজ আর পাতা জড়ো করে জ্বালানো হয়েছে আগুন। সেখানে ঢোল বাজিয়ে চলছে গান। একজন থামলেই শুরু করছেন পাশের জন। ঢোল বাদক ফাহিমকে জিজ্ঞেসা করতেই তিনি জানান, তাদের ‘ক্যাম্প ফায়ার’ অনুষ্ঠান চলছে। আয়োজক সে এবং তার বন্ধুরা। এই আয়োজনের বিশেষত্ব বলতে তিনি জানান, আমরা বন্ধুরা মিলে প্রতি বছরই এই আয়োজন করি। এরপর একসঙ্গে আমরা দুপুরের খাবার খাবো।’
শুধু বাইরেই নয়, হলের ভিতরেও চলছে নানা আয়োজন। একেক দিন একেক বন্ধুর রুমে চলছে নানা পদের রান্না। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী প্রীতি বলেন, ‘থিসিসের কাজ আর সামনে পরীক্ষা তাই এবার ছুটিতে বাড়ি যাই নি। আমার অনেক বন্ধুরাই বাড়ি যায় নি। আমরা সবাই মিলে ফন্দি এটেছি যে প্রতিদিন রান্না করবো সবাই মিলে, তবে ভিন্নতা হলো প্রত্যেকের রুমে একদিন করে রান্না হবে। আর আমাদের এই আয়োজনের নাম দিয়েছি ‘বন্ধু উৎসব’। তাই ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও বন্ধুরা থাকায় আনন্দ আর হুল্লোড়ের কমতি নেই। তবে আগামীকাল বিসিএস পরীক্ষা থাকায় অংশগ্রহণকারীরা ব্যস্ত প্রস্তুতির পর্যায়কে শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিতেও।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ জানুয়ারি, ২০১৫/মাহবুব