চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অর্নিদিষ্টকালের অবরোধ স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চবির উপাচার্যের সাথে আলোচনার মাধ্যমেই এ অবরোধ স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে অবরোধের কারণে সকালের দিকে চবির শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া অবরোধের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাস-পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হত্যা মামলার আসামী চবির সাবেক সহকারি প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকে সোমবার কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে এ অবরোধ ডেকেছে চবি ছাত্রলীগের একাংশ।
ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও মামলার অন্যতম আসামি আলমগীর টিপু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চবির উপাচার্যের সাথে আলোচনার পর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। স্যার (উপাচার্য) আমাদের মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জামিনে রয়েছি, তারপরও আমাদের হয়রানি বা গ্রেফতার না করার বিষয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন এমন আশ্বাস দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি (উপাচার্য) বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগও করেছেন। তবে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান তিনি।
ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর বোন এড. জুবাইদা নার্গিস চৌধুরী নিপা ক্ষোভের সাথে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছিলেন, মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যে ঘুরছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অথচ বারবার বলা হলেও গ্রেফতার করছে না। এরই মধ্যে আমাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায়ও রয়েছেন। তবে বর্তমানে আসামিরা রক্ষার জন্য নানা কৌশলী ভূমিকা পালন করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
চবি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৭টায় নগরীর বটতলী স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা শিক্ষার্থীবাহী শাটল ট্রেনটি ঝাউতলা স্টেশন পৌঁছালে একটি বগির হোস পাইপ কেটে দেয় অবরোধকারীরা। ফলে ওই ট্রেনটি ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এর আগে ভোর ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে টায়ারে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। এ জন্য ক্যাম্পাস থেকে চট্টগ্রাম শহরগামী কোনো শিক্ষক বাস ছেড়ে যেতে পারেনি। তবে সকাল ৮টায় পুলিশ এসে ফটকের তালা খুলে দেয়। কিন্তু এরপরও কোনো শিক্ষক বাস ও শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করেনি। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে এ ঘটনাকে দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা শুরু থেকেই ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করলেও নিহতের তিনদিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলাও করে পুলিশ। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য বাতিল কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। আসামি করা তৎকালীন সহকারী প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকেও। দিয়াজের মায়ের আপত্তিতে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে। দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। গত ৩০ জুলাই দেওয়া প্রতিবেদনে তারা বলেন, দিয়াজের শরীরে হত্যার আলামত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭/মাহবুব