রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ত:বিভাগ ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থীকে রক্ষা করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতার হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবে ছাত্র উপদেষ্টা ও ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান। রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতার নাম এরশাদুল হক রিফাত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্সের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রবিবার ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ ও ফিন্যান্স বিভাগের মধ্যে প্রথম সেমিফাইনাল খেলা ছিলো। প্রথম ইনিংসে ভূগোল বিভাগ ব্যাট করে ১৩০ রানের টার্গেট দেয়। ফিন্যান্স ব্যাট করতে নামলে প্রথম বলেই আউট হন রিফাত। স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াররা আনন্দ করছিল। মাঠ থেকে বেরোনোর সময় সুমন নামে একজন ফিল্ডারকে আঘাত করেন রিফাত।
প্রাথমিকভাবে শিক্ষকরা খেলোয়ারদের শান্ত করলে আবারো খেলা শুরু হয়। শৃঙ্খল পরিবেশ খেলা শেষে বড় ব্যবধানে জিতে ফাইনালে যায় ভূগোল। খেলা শেষে ওদের ফিন্যান্স বিভাগের খেলোয়ারদের সাথে হাত মিলিয়েও আসে ভূগোলের খেলোয়াররা। ফিন্যান্সের খেলোয়ার শিক্ষার্থীরা ওদের মত বের হতে থাকে। ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভুভুজেলা বাজিয়ে প্রবেশ করছিল। অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও ফিন্যান্সের এক শিক্ষকও তখন বের হয়ে চলে যান।
পরে গেটে এসে রিফাতসহ অন্যান্যরা ‘এই তোদের কিসের আনন্দ, বলে ভূগোলের শিক্ষার্থীদের মারধর শুরু করে। তারা দৌড়ে ভিতরে ঢুকে গেলে রিফাতরাও ভেতরে গিয়ে মারধর শুরু করে। তখন শিক্ষক মিজানুর দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনে ছিলেন। ঘটনাটি দেখে দৌড়ে স্টেডিয়ামে যান তিনি। সঙ্গে যান একই বিভাগের শিক্ষক জিহাদ আহমেদ। তারা যেতে যেতেই কয়েকজনকে মারধর করা হয়। পরে শান্ত নামে ভূগোলের খেলোয়ার মাঠের বিপরীত দিকে একা ছিল। তাকে একা দেখে তারা দৌড়ে তার দিকে যায় আর বলে ‘ওকে ধর।’ শান্ত দৌড়ে তাদের টেন্টের দিকে যেতে থাকে। রিফাতরাও তাকে ধাওয়া করে ব্যাট দিয়ে মারতে থাকে।
শিক্ষক মিজানুর মারধরের হাত থেকে শান্তকে রক্ষা করতে গেলে রিফাতের ব্যাটের আঘাত তার হাতে লাগে। এতে শিক্ষক মিজানুরের বাম হাতের কব্জিতে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। আঙ্গুলে রক্ত জমে কালো হয়ে যায়। এমনকি তার হাতে থাকা মুঠোফোন ভেঙে যায়। এ সময় শিক্ষক জিহাদকেও লাঞ্ছিত করা হয়। মাঠের বাইরে, পরে বিভাগের সামনে এসেও মারামারি করার চেষ্টা করে রিফাত ও তা সহযোগিরা।
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, রিফাতই এ ঘটনায় লিড দেয় সর্বোচ্চ অ্যাটাকে যায়।এতে আরো আহত হন ভূগোলের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আলমগীর, তৃতীয় বর্ষের জ্বীম, কিবরিয়া ও আশিকুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন।
এদিকে পুলিশ ছাড়া যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি প্রক্টর। পরে প্রক্টর পুলিশ পাঠালে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ঘটনার সময় শিক্ষক মিজানুর রহমানকে অসম্মান করে বলা হয়, কিসের শিক্ষক আপনারা। আপনারা ছাত্রদের থামাতে পারেন না। এ ঘটনায় রিফাতকেই প্রধান দায়ী করেন মিজানুর রহমান।
এ বিষয়ে রিফাত বলেন, খেলা শেষে আমরা ফিন্যান্স বিভাগের খেলোয়াররা মাঠ থেকে বের হয়ে যাই। ভূগোল বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও খেলোয়াররা মাঠে প্রবেশ করে। আর আমাদের দুজন মারুফ ও তায়েব হেলমেট, গ্লোবস, ব্যাট জমা দিতে গেলে ভূগোল বিভাগের কয়েকজন তাদের শ্লেজিং করে। তারা প্রতিবাদ করলে সবাই মিলে তাদের ব্যাট দিয়ে মারধর করে। এ সময় রিফাত নামে একটা ছেলে ওদের ফেরাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
মারধরের বিষয় অস্বীকার করে রিফাত দাবি করেন, ওরা (মারুফ, তায়েব) আমাদের ফোন দিলে আমরা সেখানে যাই। তবে আমরা তাদের মারধর করিনি। ওখানে প্রক্টর স্যার ছিলেন। উনি আমাদের আশ্বস্ত করলে আমরা ফিরে আসি।
উপ-উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। এই কাজটি করা ঠিক হয়নি। যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করা হয় অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডিপ্রতিদিন/ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান