বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) র্যাগিংয়ের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে। একই সাথে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এছাড়া, বুয়েটে কেউ সাংগঠনিক রাজনীতিতে জড়িত হলে তাকেও স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে র্যাগিং এবং সাংগঠনিক রাজনীতির বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িতদের অভিযোগসমূহ মূল্যায়ন ও শাস্তি নির্ধারণ বিষয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্টের আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি সতর্কতা, জরিমানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোনো মেয়াদে বহিষ্কার। র্যাগিংয়ের কারণে কোনো শিক্ষার্থী গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলে অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং সাময়িক মানসিক ক্ষতিসহ এ-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা। এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেওয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সেলিং করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে প্রশাসনকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি পূরণের শর্ত দেন। এই দাবি পূরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি মেনে নিল বুয়েট প্রশাসন।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর সাথে পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আমাদের দাবির এক ছোট অংশ এখনো বাকি আছে। একটি হলের র্যাগিংয়ের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এছাড়াও আমরা সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি করলে শাস্তি দেওয়ার বিধানের দাবি করেছিলাম। বিজ্ঞপ্তিতে রাজনীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো।
তবে এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে আসলে সাংগঠনিক রাজনীতির কথাই বোঝানো হয়েছে। তারা প্রশাসনের সাথে কথা বলে সেটি পরিষ্কার হতে পারে। আর তাদের সব দাবিই যেহেতু মানা হয়েছে, তার পরীক্ষায় না ফেরার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল