কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন ও ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকবৃন্দ।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়ার সঞ্চালনায় এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন।
এছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিয়া রহমান, আইন অনুষদের ডিন রহমত উল্লাহ, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভুইয়াসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
মানববন্ধনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে অপশক্তিরা মানুষের সৃজনশীল সৃষ্টকর্মকে ধ্বংস করেছে। শিল্পকর্মের এই শক্তিশালী মাধ্যম বিশেষ করে ভাস্কর্য বিদ্যা, সেটি আজকে হুমকির মুখে পড়ছে। সামগ্রিকভাবে বলতে হবে আমাদের, যে এটি একটি শিল্পকলা, এটি মানবিক বিকাশের একটি অসাধারণ মাধ্যম। সেটির বিকাশ যখন বাধাগ্রস্থ হয়, তখন মানবতা পর্যুদস্থ হয়, মানবিক গুণাবলি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, এর পেছনে ইন্ধনদাতা রয়েছে, কিছু অশুভ চক্র রয়েছে। যাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এ সময়ের দাবি।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এস মাকসুদ কামাল বলেন, কুষ্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যে উপর যে হামলা তা কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, এটি মূলত এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতির উপর হামলা। আজকে যারা ভাস্কর্যের বিপক্ষে কথা বলছে তাদের একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তারা তো আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ায়নি, এমনি বিরোধিতা করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে জাতির বিপক্ষে দাঁড়ানো মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতে যেমন আমরা ধর্মান্ধ, মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম এখন তেমন নেব।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি জাতির পিতাই কিন্তু নিষিদ্ধ করে দিয়ে গেছেন। আজকে যখন আমরা স্বাধীনতা ৫০ বছর পূর্তি করতে যাচ্ছি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি সেই সময় তারই ভাস্কর্যের উপর আঘাত হানছে দুর্বৃত্তরা। তাই এই আঘাতটা হয়েছে আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর, আমাদের পতাকার উপরে, আমাদের জাতীয় সংগীতের উপরে। বঙ্গবন্ধুর উপর হামলা মানে আমাদের অস্তিত্বের উপর হামলা। আমরা আশাকরি সরকার আমাদের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করবে।
শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা আজকে অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে দাঁড়িয়েছি। এই বিজয়ের মাসে এমন ঘটনার প্রতিবাদে আমাদের দাঁড়াতে হবে তা ভাবতেও পারি নাই। এই বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা ও ভাঙচুর করা হবে এটা কল্পনাও করা যায় না। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এর বিরুদ্ধে না-ও দাঁড়ায়, কোনো সরকার যদি এর বিরুদ্ধে না-ও দাঁড়ায়, কোনো ব্যাক্তি যদি না-ও দাঁড়ায় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তার ঐতিহ্য নিয়েই এর প্রতিবাদ করবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন