ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগে বন্ধ থাকা আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। এ দাবিতে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন।
একই সাথে আবাসন, পরিবহন ও পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক (অনার্স) ও স্নাতকোত্তরের (মাস্টার্স) পরীক্ষা গ্রহণ ও বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির সিদ্ধান্তের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশন।
এর আগে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক সভায় করোনার কারণে আবাসিক হলগুলো বন্ধ রেখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতক অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার হল বন্ধ রেখে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে, ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, আবাসন, পরিবহন ও পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবতা বিবর্জিত এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী। পরীক্ষা নেওয়ার পূর্বে হল খুলে দেওয়াসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তারা।
এসব দাবিতে রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজামান কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ঢাবি সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন স্বাক্ষরিত ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, সেশনজট নিরসন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত জরুরী।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য হলে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এ ধরনের সিদ্ধান্তগ্রহণ একপাক্ষিক, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিপ্রতীপ, বিদ্যমান বাস্তবতায় অনুপযুক্ত সমাধান এবং কোন অবস্থাতেই অভিভাবকসুলভ নয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-প্রত্যাশা-অধিকারের আলোকে হল খুলে দিয়ে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
এদিকে আবাসন, পরিবহন ও পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে অনার্স-মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলোর দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে মন্তব্য করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা, পরিবহন ও সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করার পর দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
রবিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি ফয়েজউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা না করেই পরীক্ষা নিয়ে দায় সারতে চাচ্ছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলোর আয়োজন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। তবে তড়িঘড়ি করে শিক্ষার্থীদের সমস্যাকে অগ্রাহ্য করে পরীক্ষা আয়োজন করা হলে শিক্ষার্থীরা তা মানবে না।
ছাত্র ফেডারেশনের বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদেরই আবাসনের ব্যবস্থা করে পরীক্ষায় বসতে হবে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে ঢাবি উপাচার্যের এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অন্যায্য, একপাক্ষিক ও স্বৈরতান্ত্রিক। উপাচার্যের এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও দায়সারা বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর