শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাকালে অনলাইনে সম্পন্ন হওয়া দুই সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিল থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর পাঁচ দফা দাবি তুলে কর্তৃপক্ষকে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিবার উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে পাঁচ দফা দাবিসহ বিভিন্ন প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরর কাছে দিয়েছেন এই সেশনের শিক্ষার্থীরা। দাবি মেনে নেওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নগুলোর উত্তর জানাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা।
একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রচার সম্পাদক ও কার্টুন ফ্যাক্টরির সাধারণ সম্পাদক মাইশা আনান প্রভা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রেরণের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো ১. প্রতি সেমিস্টারের পূর্বে এক মাস সময় নিয়ে অফলাইনে রিভিউ ক্লাস নেওয়া, প্রতি পরীক্ষার আগে ক্রেডিট প্রতি দুইদিন বিরতি দেওয়া এবং শতভাগ উপস্থিতি নম্বর প্রদান করা। ২. সকল ধরনের ফি ৭০% মওকুফ করে পরীক্ষা শুরুর তিন কার্যদিবস আগ পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া পরিশোধের সুযোগ দেওয়া। ৩. শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক, মানসিক এবং স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করে সকল আবাসিক হল খুলে দেওয়া। ৪. সকল সেশনের সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা। ৫. প্রশাসনকে সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
পাঁচ দফা দাবি উত্থাপনের পাশাপাশি করোনাকালিন সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ যৌক্তিক কিনা, কোন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে তার দায়ভার কর্তৃপক্ষ নিবে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
২২ ডিসেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে উত্থাপিত দাবি মেনে নিয়ে জানতে চাওয়া প্রশ্নের উত্তর না দিলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষার্থীদের আলাদা এই দুই প্ল্যাটফর্ম।
সম্প্রতি ৪৩তম বিসিএসের সার্কুলার ঘোষণার পর চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কথা বিবেচনায় নিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে আগামী ১৭ জানুয়ারি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স এর চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে অফলাইনে এক এক করে সকল বিভাগের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বললেও আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হল বন্ধ থাকা অবস্থায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের থাকার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত জানাননি তারা। তবে যেসব মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে থাকায় সমস্যা হবে তাদের বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
অনলাইন ক্লাসের শুরুতে পরীক্ষা গ্রহণের আগে অফলাইনে রিভিউ ক্লাস নেওয়ার কথা বললেও সে ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিলে কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। ক্লাসে উপস্থিতি ও টার্মটেস্টে নম্বর প্রদানে মানবিক হওয়ার কথা বললেও প্রকৃত অর্থে অনেক বিভাগের বিভিন্ন কোর্সের শিক্ষক পরীক্ষা গ্রহণ ও নম্বর প্রদানে কড়াকড়ি করছেন।
একাডেমিক কাউন্সিল থেকে পরীক্ষা সক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের পর এবং কর্তৃপক্ষের দেওয়া পূর্বের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক শিক্ষার্থীরা সমালোচনা করছেন।
একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগকে তাদের নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিরসনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সে নির্দেশনা মানতে নারাজ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট প্রধান।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থার সাথে আমি জড়িত না। আর বিভাগতো কোন আবাসন প্রতিষ্ঠান না। যদি আমার বিভাগের কোন নারী শিক্ষার্থী আবাসন সংক্রান্ত সমস্যায় পড়ে তখন আমি তাদেরকে প্রভোস্ট বরাবর রেফার করবো। আর একাডেমিক কাউন্সিলে বিভাগকে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টা কথার প্রসঙ্গে চলে আসছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক কিনা এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, “করোনা প্যানডেমিকের মধ্যে তাদের এসব দাবি যৌক্তিক না। যেহেতু শিক্ষার্থীদেও ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া আমাদের দরকার, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরকে তাদের জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে, প্রশাসনকেও তাদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করতে হবে। সবাইকে ছাড় দিতে হবে।”
এই প্যানডেমিকের মধ্যে ফি মওকুফের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা ভিসি স্যার বিবেচনা করে দেখবেন। কিন্তু হল খুলে দেওয়া বা এক মাস রিভিউ ক্লাস নেওয়া তো এখন সম্ভব না।”
শিক্ষার্থীরা আবাসন সমস্যায় পড়লে থাকবে কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সকল প্রতির্কূলতা মোকাবেলা করেই আমাদের একসাথে এগিয়ে যেতে হবে। এক বন্ধু সমস্যায় পড়লে অন্য বন্ধুকে দেখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যেমন সহযোগিতা প্রয়োজন, তেমন শিক্ষার্থীদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা