গাড়িচাপায় এক নারীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে সরব হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও অননুমোদিত যান চলাচলের বিরুদ্ধে রবিবার দিনব্যাপী সমাবেশ, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি পালন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিন ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে বহিরাগত যান চলাচলে বাধা দেয় তারা। তবে, এসব বিষয়ে নিষ্ক্রিয় অবস্থানে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত প্রক্টরিয়াল টিমকে।
এর আগে, গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আজাহার জাফর শাহর প্রাইভেট কারের ধাক্কায় রুবিনা নামের এক নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গাড়ির নিচে আটকানো অবস্থায় ওই নারীকে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁচড়ে নিয়ে যান তিনি। এমন ভয়াবহ ঘটনার পর নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ দাবিতে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সমাবেশ করে কয়েকশ শিক্ষার্থী। এসময় ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবিগুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা ও শান্তির বিধান নিশ্চিত করা; ক্যাম্পাসের প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো; ক্যাম্পাসে শুধুমাত্র নিবন্ধিত রিক্সা চলাচল এবং রিকশাচালকদের জন্য ইউনিফর্ম ও ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা; ভ্রাম্যমাণ দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা এবং ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা; শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসের কিছু স্থানে সংরক্ষিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা;মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী উচ্ছেদ করা; পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা এবং পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা; প্রক্টর অফিসে জমে থাকা সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করা; নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষে প্রক্টোরিয়াল অফিসের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ;নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা ও রুবিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করা।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাবিগুলো তুলে ধরেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিনা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ১১ দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। যদি আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের স্বপক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি নিয়ে দিতে বাধ্য হব।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘দাবি মোদের একটাই নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘অনিয়মের ঠাই নাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘বিকেকের প্রশ্ন করি, এবার যদি আমরা মরি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এদিকে, সমাবেশের পর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষার্থী। এসময় নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে স্লোগান দেন তারা। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্ত্বর থেকে দোয়েল চত্ত্বর পর্যন্ত মিছিল করেন। পরে টিএসসি এলাকায় ফিরে বহিরাগত গাড়ি চলাচলে বাধা দিতে শুরু করেন তারা। বিকেল তিনটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালান তারা। পরে প্রশাসনিক ভবে গিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে ১১ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করে শিক্ষার্থীরা। এদিকে, একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
কী বলছে প্রশাসন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ন্ত্রিতভাবে বহিরাগত যানচলাচলের অভিযোগ অনেক দিনের। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এবিষয়ে ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে’। তবে, আন্দোলন চলাকালীন সময়েও বেশ কিছু পণ্যবাহী বড় যানবাহন ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থী কর্তৃক যান চলাচলকে আইন হাতে তুলে নেওয়ার সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, আমাদের নানান দাবি দাওয়া থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু আমরা যেন আইন হাতে তুলে না নিই। কেননা, যানবাহন থামাতে গিয়ে কেউ আহত হলে সেটা তো আরেকটি সমস্যা তৈরি করবে।
বহিরাগত মানুষ বা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিনই তো ক্যাম্পাসে নতুন নতুন ঘটনা ঘটে। সব কিছুর জন্য তো পরিকল্পনা থাকে না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল