চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনকালে এক কর্মচারী অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন। অজ্ঞান হওয়া ব্যক্তির নাম শরিফুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের মালি পদের চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মচারী।
সোমবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত-রাত সাড়ে ৮টার দিকে অনশনকালে জ্ঞান হারান তিনি। এসময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজ ও প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এসময়, অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান তারা। তবে অনশনকারীরা এতে সাড়া কোন সাড়া দেননি। বরং তাদের চাকরি স্থায়ী হওয়ার নিশ্চয়তা না দেওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের ফটকের সামনে এই কর্মসূচী শুরু করেন তারা। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন হলের মালি, বাবুর্চি, এটেন্ডেন্ড, সুইপার, ক্লিনার, পিয়ন, নিরাপত্তারক্ষী ও প্রশাসনিক ভবনের ১৫৫ জন চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মচারীরা।
গত ১৯ ডিসেম্বর চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মানববন্ধনে আমরণ অনশনের আল্টিমেটাম দেন তারা। এর আগে চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৫ জন কর্মচারীর স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপি প্রশাসন বরাবর জমা দেন তারা
অনশনকারীরা জানান, প্রায় আট দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক ৪০০ টাকায় মজুরী ভিত্তিতে চাকরী করছেন তারা। চাকরি দেয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে ৪/৫ মাস পরে তাদের চাকরি স্থায়ী করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায়নি, বরং বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন পদে অন্যান্যদের চাকরী দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
অনশনকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের অফিস সহকারী ফরহাদ হোসেন বলেন, 'একজন অজ্ঞান হয়ে গেছে আমারও শরীর খারাপ লাগছে। তবে এবার আমাদের বাঁচার মরার লড়াই! যতক্ষণ প্রশাসন চাকরি স্থায়ী করার দাবি মেনে না নিবে ততক্ষণ অনশন চালিয়ে যাবো। প্রয়োজনে সারারাত এখানে কাটিয়ে দিবো।'
রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ আন্দোলনরতদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই নিয়ম মেনে হয়। নতুন হলগুলোতে চাইলেতো কাউকে নিয়োগ দেয়া যায়না। নীতিমালা অনুযায়ী যারা আবেদন করবে যোগ্যতার ভিত্তিতে তারা এতে সুযোগ পাবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'সবমিলিয়ে নতুন হল গুলোতে প্রায় ৭৩ টা শূন্য আসন রয়েছে। আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই মালি, বাবুর্চি, পিয়ন, ক্লিনার হিসেবে বর্তমানে কাজ করছে। কিন্তু নতুন হলে এধরনের কোন পদই নেই। তাছাড়া ১৫৫ জনকে একসাথে কারো পক্ষে চাকরি স্থায়ী করা সম্ভব নয়। আমরা তাদেরকে অনশন প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি এবং এব্যাপারে আলোচনা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছি কিন্তু তারা মানছে না।'
এদিকে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ১৮ নং হল পরিদর্শন শেষে অনশনরতদের সাথে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য দিল আফরোজ।
এসময়, কর্মচারীদের অনশন প্রত্যাহার করে নিজ নিজ কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি নবনির্মিত হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, 'দৈনিক মজুরীতে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীদের নতুন হলে আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে। যারা আবেদন করবে তাদের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।'
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন