নয় দিন শীতের ছুটির শেষে খুলছে ক্যাম্পাস। নতুন বছরের প্রথম দিনে ক্লাস-পরীক্ষা জন্য শিক্ষার্থীরা শেষ মুহূর্তে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে ক্যাম্পাস খুললেও নতুন বছরের প্রথমদিনে ফেরা হচ্ছে না অনেক শিক্ষার্থীর। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছেন না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকও।
দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ছোট পরিসরের এই জবি ক্যাম্পাস সবসময় মুখরিত থাকে হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণায়। গত এক বছরে চিরতরে হারিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। যাদের আর দেখা যাবে না টিএসসিতে, কাঁঠাল তলায়, লাল বাসের গেটে গানের সুরে, ক্যান্টিনের গোল টেবিলে কিংবা শান্ত চত্বরের আড্ডায়।
চলতি বছরে এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, খাদ্য বিষক্রিয়া, গ্যাস বিস্ফোরণসহ অস্বাভাবিক মৃত্যুতে প্রাণ হারিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী ছাড়াও এবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হারিয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হককে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর চলতি বছরের ১১ নভেম্বর মারা যান তিনি।
যার শুরুটা হয়েছে গত ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মো. রাজু আহমেদ মারা যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। পুরান ঢাকার নারিন্দার একটি মেস থেকে খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্টে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চার দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যু অস্বাভাবিক বলে দাবি করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান রাজুর বাবা। যদিও পরিবারের কেউই মামলা কিংবা আইনগত পদক্ষেপের দিকে এগোয়নি।
রাজুর মৃত্যুর এক মাস পর ৬ মে সকালে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওন নামের আরেক শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেন। শাওন পুরান ঢাকার ধূপখোলা বাজারে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন৷
পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রুদ্র সরকার। চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে রুদ্র জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। এরপর অবস্থার অবনতি হলে ২৯ জুলাই কুড়িগ্রামে আবার পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি হাসপাতাল ও রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর কিডনি ও ফুসফুসে সংক্রমণ হলে রুদ্রকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৪ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিন দিন পেটের পীড়ায় ভুগতে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা ৮ অক্টোবর মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। মেডিকেল সেন্টার থেকে তাকে পর্যাপ্ত স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরদিন তার অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। পেটে ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা বেড়ে যাওয়ায় তার রুমমেটরা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা ফুড পয়জনিংয়ের কারণে সোহেলের কিডনির সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। পরদিন ১০ অক্টোবর ভোর ৬টায় তার মৃত্যু হয়।
২৪ নভেম্বর অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (অবর্ধক রক্তশূন্যতা) রোগে আক্রান্ত হয়ে শিহাব মিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর মারা যান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এ রোগে ভুগেছিলেন শিহাব। শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুরে তার নানার বাড়িতে মারা যান শিহাব।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল