আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সাদাত রহমানকে সংবর্ধনা দিয়েছে ওয়ালটন। সাইবার বুলিং ও সাইবার অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় সাদাতকে ওই পুরস্কার দেয় ‘কিডস রাইটস’ নামের একটি সংগঠন। ‘শিশুদের নোবেল’ খ্যাত মর্যাদাকর ওই পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে আনায় সাদাতকে সংবর্ধনা দিল ওয়ালটন।
বুধবার ওয়ালটন করপোরেট অফিসে এ উপলক্ষ্যে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাদাতের হাতে ক্রেস্ট ও স্বর্ণপদক তুলে দেন ওয়ালটন করপোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মাহবুবুল আলম, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ, দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক সাবিহা জারিন অরনা এবং নিশাত তাসনিম শুচি।
অনুষ্ঠানে ওয়ালটনের পক্ষ থেকে সাদাত রহমানের প্রতিষ্ঠিত ‘নড়াইল ভলান্টিয়ার্স’কে ফান্ডিং বাবদ ৫ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাদাত রহমানের বাবা মো. সাখাওয়াত, ওয়ালটন গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার ও ইভা রিজওয়ানা নিলু, নির্বাহী পরিচালক এস এম জাহিদ হাসান, মো. হুমায়ূন কবীর, কর্নেল (অব.) এস এম শাহাদাত আলম, মো. রায়হান, মো. ফিরোজ আলম, আমিন খান, ও আনিসুর রহমান মল্লিক, সিনিয়র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহজাদা সেলিম, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাকিব উদ্দীন, ফার্স্ট সিনিয়র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মিলটন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর অগাস্টিন সুজন, রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা বিপর্যয়ের মাঝে মর্যাদাকর এই পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে সাদাত সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সাদাত তরুণদের কাছে আইকন। সে বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে।
বর্ণাঢ্য সংবর্ধনার মাধ্যমে তাকে সম্মানিত করায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান সাদাত রহমান। তিনি বলেন, সাইবার বুলিং একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। প্রতি ৩ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। যখন কিশোর-কিশোরীরা বিপদে পড়ে, তখন সেটা কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপস তৈরি করি। এর মাধ্যমে ১৩ থেকে ১৯ বছরের কিশোর-কিশোরীরা প্রযুক্তিগত ও মানসিক সহায়তা পাচ্ছেন। গত এক বছরে আমরা আড়াইশ’র বেশি শিশু-কিশোরকে সাপোর্ট দিতে পেরেছি। ইতোমধ্যে ৮ জন সাইবার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে।
ওয়ালটন বিশ্বের বুকে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’কে তুলে ধরছে বলে জানান তিনি। এ সময় সাদাত তরুণদের আরো বেশি সুযোগ দেয়ার জন্য ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
গোলাম মুর্শেদ বলেন, সাদাত বাংলাদেশের গর্ব। ‘শিশুদের নোবেল’ খ্যাত এই শান্তি পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে সে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ অবহেলিত না। ওয়ালটন পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, সাদাত বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে এত বড় অর্জন আর হয়নি। সাদাতের মতো তরুণরা দেশকে গৌরবময় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে ওয়ালটন। ওয়ালটনকে নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশ গর্ব করে। ওয়ালটন আমাদের পণ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল অর্জন।
উল্লেখ্য, নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাদাত রহমান ২০১৭ সালে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘নড়াইল ভলান্টিয়ার্স’ নামের সামাজিক সংগঠন। ওই সংগঠনের একটি প্রকল্প হিসেবে ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপের যাত্রা শুরু হয় গত বছর অক্টোবর মাসে। যার মাধ্যমে ‘সাইবার অপরাধ’ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন সাদাত। পাশাপাশি সাইবার বুলিং, স্প্যামিং, হ্যাকিং, গুজব, অনলাইন নিরাপত্তাসহ নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছেন সাদাত এবং তার দল। এরই প্রেক্ষিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স পিস প্রাইজ ২০২০’ পান সাদাত রহমান। গত ১৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে এক অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাদাত রহমানকে পুরস্কার তুলে দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন