এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা গত বৃহস্পতিবার একটি অভিজ্ঞতা বিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন করে, যেখানে ৫ মাস বয়সী ছোট্ট শিশু আব্দুল্লাহ সাফওয়ান-এর প্যাটেন্ট ডাস্টাস আর্টেরিওসাস (পিডিএ)-এর কার্ডিয়াক সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে ডা. তাহেরা নাজরীন, ডা. সাবিনা সুলতানা এবং ডা. সোহেল আহমেদসহ সার্জারিতে অংশগ্রহণকারী এভারকেয়ার হাসপাতালের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকদের সাথে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হাসপাতাল বাংলাদেশ-এর সিইও ডা. রাত্নাদ্বিপ চাস্কার, ভিনায় কাউল, সিএমও এবং এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা’র কার্ডিয়াক অ্যানেস্থেশিয়া এবং সিটি-আইসিইউ বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নিয়াজ আহমেদ।
সাফওয়ান গত ২৫ এপ্রিল ডা. তাহেরা নাজরীন, কনসালটেন্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর অব পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি-এর ত্বত্তাবধায়নে এভারকেয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায়, সাফওয়ান একটি বড় পিডিএ-এর পাশাপাশি অধিক মাত্রায় পালমোনারি হাইপারটেনশন, নিউমোনিয়া, হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া, তীব্র গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস, ইলেক্ট্রোলেটস ইমব্যালেন্স এবং ওজন স্বল্পতার মতো জটিল সব রোগে ভুগছে। সাধারণত প্যাটেন্ট ডাস্টাস আর্টেরিওসাস (পিডিএ) ডা. তাহেরা নাজরীন-এর ত্বত্তাবধায়নে, নন-সার্জারিক্যাল পদ্ধতিতে ডিভাইজ দ্বারা বন্ধ করা হয়।
কিন্তু সাফওয়ান-এর পিডিএ সেই পদ্ধতিতে বন্ধ করা সম্ভব হতো না কারণ এর আকারটি ছিল অস্বাভাবিক মাত্রায় বড় (১০ মি.মি)। বাচ্চাটির অধিক মাত্রায় পালমোনারি (ফুসফুস) হাইপারটেনশন ছিল, যার কারণে তার অবস্থা গুরুতর হয়ে পরে (উদাহরণ, তীব্র পালমোনারি হাইপারটেনশন জটিলতা)। হাসপাতালে অবস্থানকালে শিশুটির ২ বার হৃদস্পন্দন থেমে যায়, খিঁচুনি হয় এবং এর ফলে তাকে ভ্যান্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়।
ফলে ডা. তাহেরা নাজরীন, কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সোহেল আহমেদ এবং সিনিয়র প্যাডিট্রিশিয়ান ডা. সাবিনা সুলতানা-এর মেডিকেল বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে সার্জারির মাধ্যমে পিডিএ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। আইসিইউ-তে পালমোনারি হাইপারটেনশন জটিলতা ও হার্ট ফেইলিওর নিয়ন্ত্রণে আনার পর গত ৫ মে ডা. সোহেল আহমেদ শিশুটির অপারেশন সম্পন্ন করেন। পালমোনারি হাইপারটেনশন জটিলতাসহ অপারেশন পরবর্তী অন্যান্য জটিলতার কথা চিন্তা করে শিশুটিকে অপারেশনের পর সিটি-আইসিইউতে রাখা হয়। তবুও সকল ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য কর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুটির শারীরিক অবস্থা উন্নতি করতে শুরু করে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল-এর সিইও ডা. রাত্নাদ্বিপ চাস্কার বলেন, ‘এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা-এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। রোগীদের এখন আর বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজন নেই। জীবন রক্ষার্থে অভিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞরা একসাথে এগিয়ে আসছে। সকলকে সেরা সেবা দিতে আমরা আশাবাদী। কোনো বাংলাদেশের নাগরিককে যাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেন বিদেশে যেতে না হয়, এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। দেশেই স্বাস্থ্যসেবার সকল সুবিধা প্রদানের বিষয়ে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
সার্জারিকালীন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা’র কনসালটেন্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর অব পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি ডা. তাহেরা নাজরীন বলেন, ‘পালমোনারি হাইপারটেনশন জটিলতা এবং হার্টের জন্মগত রোগ এমন একটি জটিলতা সৃষ্টি করে, পুরো বিশ্বেই যার চিকিৎসা ভীষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। শিশুটির আইএনও-এর মতো চিকিৎসা ও পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল, যা আমাদের দেশে কোথাও পাওয়া যায় না। সৌভাগ্যবশত, আমাদের হার না মানা, গুণী ও অভিজ্ঞ দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাহায্যে আমরা শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়েছি।’
সিনিয়র প্যাডিট্রিশিয়ান ডা. সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘এই ধরনের রোগী কিডনী ফেইলিওর এবং ডাইসেলেক্ট্রোলাইটেমিয়া’র ঝুঁকিতে থাকে। পাশাপাশি তার ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টও গুরুতর ছিল, যার জন্য তার একজন প্যাডিট্রিশিয়ান এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিমের সর্বোপরি পর্যবেক্ষণে থাকার প্রয়োজন ছিল।’
এই ধরনের সার্জারিগুলো অত্যন্ত জটিল। এ কারণে সার্জারিতে বিশেষ দক্ষতা এবং নির্ভুলতার প্রয়োজন। বিশেষত, যেহেতু রোগী একটি শিশু, এই সার্জারির সফল অপারেশন ছিল এক অনন্য দৃষ্টান্ত। রোগীর শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে ডা. সোহেল আহমেদ, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর (সিটিভিএস) বলেন, ‘সাধারণত হৃৎপিণ্ডের বাম দিক শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্তকে পাম্প করে এবং ডান পাশের কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত রক্ত ফুসফুসে পাম্প করে। পিডিএ আক্রান্ত বাচ্চার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্ত হৃদয়ের গ্রেট আর্টারি থেকে ফুসফুসের আর্টারিতে প্রবেশ করে। যদি কারও পিডিএ বড় হয়, অতিরিক্ত রক্ত ফুসফুসের আর্টারিতে প্রবেশ করে। তবে তা হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের কাজ আরও দ্রুতগামী করে তোলে, যার ফলে ফুসফুস কঞ্জেস্টেড এবং হাইপারটেনসিভ হয়ে যেতে পারে।’
ইভেন্টটির মডারেটর, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা’র সিনিয়র জিএম-মেডিকেল সার্ভিস ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা এই মহামারিতে কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের একযোগে চিকিৎসা করছে এবং লক্ষণীয় সফলতা অর্জন করেছে।’
উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকায় সফল সার্জারির ঘটনা নতুন নয়। এটি দেশের প্রথম এবং একমাত্র জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল। এভারকেয়ার গ্রুপ সম্প্রতি এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম-এর উদ্বোধন করেছে, যা বন্দরনগরীর সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র মাল্টি ডিসিপ্লিনারী সুপার-স্পেশিয়ালিটি টেরশিয়ারী কেয়ার হাসপাতাল।
বিডি প্রতিদিন/এমআই