করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দফায় দফায় বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলো বন্ধ থাকায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব এমিউজম্যান্ট পার্কস অ্যান্ড এট্রাকশনস (বাপা)। তাদের মতে, অন্যান্য সেক্টরের মতো পার্কগুলোও খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। বুধবার (২ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাপার সভাপতি শাহরিয়ার কামাল।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিনোদন ও পর্যটন সেক্টরে প্রচুর বিনিয়োগ এবং ব্যাংক ঋণ রয়েছে। লকডাউনকালীন এ সেক্টর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক উদ্যোক্তা আর্ধিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সেক্টর বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ঠিকমত দেওয়া সম্ভব নয়। এতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও এ সেক্টরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লাখ লাখ পরিবারের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কামাল বলেন, গত বছর লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সেক্টরকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা দেওয়া হলেও পর্যটন শিল্প তথা বিনোদন পার্কগুলোকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়নি।
তিনি বলেন, বেসরকারি পার্কগুলো কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বা পার্বত্য জেলার সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। সেখানে দর্শনার্থীদের যে ঢল নামে, তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ ও তাদের সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখানে আগত দর্শনার্থীদেরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যত ওয়াটার পার্ক রয়েছে। সেখানের পানি ক্লোরিন দিয়ে পরিশোধিত করা হয়। ক্লোরিন মিশ্রিতপানিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সুযোগ নেই।
দেশে অবস্থিত বিনোদন পার্কের টিকে থাকা ও স্ব-অবস্থায় ফিরে আসার স্বার্থে কিছু প্রস্তাবনা দেয় বাপা। সেগুলো হলো- অতি সত্ত্বর অন্যান্য সেক্টর/প্রতিষ্ঠান সমূহ খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই মোতাবেক বিনোদন পার্কগুলোও খুলে দেওয়া। বিনোদন পার্কসগুলো টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিনোদন পার্কসমূহকে অন্তর্ভূক্ত করা। আগামী ৫ বছরের জন্য বিনোদন পার্ক এর ওপর ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ অন্যান্য কর মওকুফ করা যাতে অপেক্ষাকৃত কম মূল্য পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সেবা নিশ্চিত করা যায়। আগামী ৫ বছর নতুন বিনোদন পার্ক নির্মাণ ও বর্তমান স্থাপনার সংযোজনার জন্য আমদানি করা বিভিন্ন রাইডসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির মূসক ও শুল্ক কর মুক্ত আমদানির সুযোগ দেওয়া। চলতি মূলধন যোগান নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে ১ শতাংশ হারে সুদে ঋণ দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, এবারও সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে করোনার ১ম পর্যায়ের মতো ২য় পর্যায়ের ধাক্কাও বর্তমান সরকার সামলে উঠবে। গত বছরের একই সময়ে অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো সময় মতো খুলে দেওয়া হলেও বিনোদন পার্কগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছিল অনেক পরে। ফলে এ খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি শিশু একটি কিশোর বা একটি পরিবার যদি দীর্ঘদিন ধরেই বদ্ধ পরিবেশে আবদ্ধ থাকলে তার মানসিক ভারসাম্য অনেকটা হারিয়ে যায়। এছাড়াও শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতার পর থকে এ পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে একটিও শিশু পার্ক নির্মাণ হয়নি। যাও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি ছিলো, তাও বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে ১৯৯০ সাল থেকে দেশে পার্ক বানানো হয়। কিন্তু এই খাতে আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। ২৩টি খাতে এক লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। আমরা এই সরকারকে স্বাগত জানাই। আবার ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হলো। কিন্তু শিশুদের বিনোদনের জন্য কোনো পার্ক হয়নি। এই সেক্টরে সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই। শিশুদের বিনোদনের কী কোনো প্রয়োজন নেই?
তিনি আরও বলেন, গত বছর করোনা মহামারির পর দেশের সব সেক্টর খুলে দেওয়া হলো কিন্তু পার্কগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা বলতে পারি, আমাদের পার্কগুলো উন্মুক্ত ও খোলা পরিবেশের। তাই করোনাকালে যদি পার্কগুলো খুলে দেওয়া হয়, তবে মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাপার উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সারাদেশে প্রায় ৩০০ মতো পার্ক রয়েছে। গত বছর করোনার সময়ে (প্রথম দফা) ৬ মাস পার্ক বন্ধ ছিল। পরে আমরা চালু করেছিলাম। এবছর করোনার দ্বিতীয় দফায় ২ মাসের বেশি সময় হলো পার্কগুলো বন্ধ রয়েছে। এ সময় পার্ক বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা